সিরিয়ায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান ঘটেছে এক অত্যাশ্চর্য গতিতে। বিদ্রোহীরা মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে একাধিক শহর দখল করে রোববার রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ কোনোরকম প্রতিরোধ ছাড়াই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
কিন্তু কিভাবে এতো দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটে গেল বাশার আল-আসাদের দ্রুত পতন? সেই প্রশ্নই এখন দানা বেঁধেছে জনমনে।
দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো-
১. দুর্বল সেনাবাহিনী:
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সেনাবাহিনী দীর্ঘ ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের ফলে প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেনাবাহিনীর জনবল, সরঞ্জাম ও মনোবল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সেনা চুক্তিভঙ্গ ও পালিয়ে যাওয়ার কারণে সেনাবাহিনী ২০১১ সালের পর থেকে প্রায় অর্ধেক জনবল হারায়।
২. মিত্রদের সহায়তার অভাব:
বাশার আল-আসাদের সরকার মূলত দুই মিত্র দেশ ইরান ও রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিজেই সমস্যায় জর্জরিত। ইরানও ইসরাইলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে বিপর্যস্ত। মূলত এ কারণেই বাশার বাহিনীর মধ্যে দুর্বলতা তৈরি হয় এবং তা বিদ্রোহীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে।
৩. হিজবুল্লাহর অক্ষমতা:
ইরান সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ সিরিয়ার যুদ্ধে আসাদকে সহায়তা করছিল। কিন্তু ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে তারাও সিরিয়া থেকে সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এতে আসাদের বাহিনী আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
৪. বিদ্রোহীদের অগ্রগতি:
হায়’আত তাহরির আল-শাম (HTS)-এর মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশ থেকে অভিযান শুরু করে এবং মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে একের পর এক শহর দখল করে নেয়। বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক এই অগ্রগতির মুখে দুর্বল আসাদ বাহিনী কোনো উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। যার ফলস্বরূপ বাশারের পতন দ্রুত সময়ে ঘটে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সিরিয়ায় আসাদের পতনকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ইরান ও হিজবুল্লাহর ওপর আঘাতের সরাসরি প্রভাব’ বলে উল্লেখ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও দাবি করেছেন, তাদের কৌশল মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করেছে।
পরবর্তী পরিণতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসাদের পতন সিরিয়ার ১৪ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানের একটি সূচনা হতে পারে। তবে দেশটিতে এখন নতুন করে রাজনৈতিক শূন্যতা ও অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সূত্র: এএফপি, এপি ও ফ্রান্স২৪