আর্কাইভ | ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউস সানি ১৪৪৬ ০৭:১৭:৫৯ অপরাহ্ন
Photo
এখন বাংলা ডেস্ক
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
০৫:৪১:৩৪ পূর্বাহ্ন
আপডেটঃ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
০৬:৪৮:১৮ পূর্বাহ্ন

হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা


লেবাননভিত্তিক শিয়া ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।

শনিবার এক এক্স বার্তায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়। এতে বলা হয়, ‘হাসান নাসরুল্লাহ আর বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করতে পারবেন না।’ এ খবর বিবিসির। এদিকে পার্স টুডে হিজবুল্লাহর সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ প্রধানকে টার্গেট করে হামলার দাবি করেছে ইসরাইল। তবে হিজবুল্লাহ প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ সুস্থ ও নিরাপদে আছেন।  


রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় গতকাল শুক্রবার রাতভর বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। জানা যায়, ইরান–সমর্থিত হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টারে সংগঠনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও অন্য নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এরপর হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার খবর জানানো হলো।


তবে হামলায় হাসান নাসরুল্লাহর ভাগ্যে কী ঘটেছে, সেটা নিয়ে হিজবুল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি, কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, তাঁর (নাসরুল্লাহ) নাগাল পাওয়া যায়নি।

গতকালই যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে ভাষণ দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননে হামলা অব্যাহত রাখবে তাঁর দেশ। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরপরই লেবাননে জোরালো হামলা চালানো হয়েছে।

হাসান নাসরুল্লাহর (৬৪) জন্ম ১৯৬০ সালে। বেড়ে উঠেছেন বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের বুর্জ হামুদ এলাকায়। বাবা আবদুল করিম ছিলেন একজন সাধারণ সবজি বিক্রেতা। তাঁর ৯ সন্তানের মধ্যে নাসরুল্লাহ ছিলেন সবার বড়।

১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের মুখে পড়লে হাসান নাসরুল্লাহ শিয়া মুভমেন্ট ‘আমাল’–এ যোগ দেন। পরে ১৯৮২ সালে আরও কয়েকজনের সঙ্গে দলটি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার কথা জানায় হিজবুল্লাহ। তাতে যোগ দেন হাসান নাসরুল্লাহ।

হিজবুল্লাহ শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে চিহ্নিত করে ‘ইসলামের প্রধান দুই শত্রু’ হিসেবে। সেই সঙ্গে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে ধ্বংস করার ডাক দেয় তারা। দেশটিকে আখ্যায়িত করে মুসলিমদের ভূমি দখলকারী হিসেবে।

১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন নাসরুল্লাহ। এর আগে ইসরায়েলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তাঁর পূর্বসূরি আব্বাস আল–মুসাবি। হিজবুল্লাহপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া ছিল হাসান নাসরুল্লাহর প্রথম কাজ। সে অনুযায়ী ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার নির্দেশ দেন তিনি।

নাসরুল্লাহ লেবাননের দক্ষিণে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গেও তাঁর যোদ্ধাদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। একপর্যায়ে ২০০০ সালে সেখান থেকে পিছু হটে দেশে ফিরে যান ইসরায়েলি সেনারা। তবে নাসরুল্লাহর ব্যক্তিগত ক্ষতিও কম হয়নি। ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ দিতে হয় তাঁর বড় ছেলে হাদিকে।

নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের পাশাপাশি ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণগত সহায়তা দিয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যে ইরানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটের এক সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে হিজবুল্লাহর।

দখলকৃত লেবাননি ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের তাড়াতে প্রথমে একটি মিলিশিয়া দল হিসেবে গড়ে উঠেছিল হিজবুল্লাহ। পরে এ দলকেই লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এক বাহিনীতে রূপ দেন নাসরুল্লাহ। সংগঠনটি এখন দেশের রাজনীতিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তারকারী একটি শক্তি।

সর্বশেষ হিজবুল্লাহ–ইসরায়েল উত্তেজনা বেড়ে যায় গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে। ওই দিন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের রকেট হামলার জের ধরে গাজায় নজিরবিহীন তাণ্ডব শুরু করে দেশটি। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে মাঝেমধ্যেই ইসরায়েলের অভ্যন্তর ও দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় রকেট হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ।


সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ সুস্থ ও নিরাপদে আছেন: হিজবুল্লাহর সূত্র

ইহুদিবাদী গণমাধ্যমগুলো লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শুক্রবারের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করার যে দাবি করেছিল তা নাকচ করে দিয়েছে হিজবুল্লাহ।

সংগঠনটির নিরাপত্তা সূত্রগুলো প্রেস টিভিকে জানিয়েছে, সাইয়্যেদ নাসরুল্লাহ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন এবং বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীতে সর্বসাম্প্রতিক ইসরাইলি বিমান হামলায় তার কোনো ক্ষতি হয়নি।

ইহুদিবাদী গণমাধ্যমগুলো শুক্রবার রাতে দাবি করে, দক্ষিণ বৈরুতের দাহিয়ে এলাকায় যে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে তার প্রধান লক্ষ্য ছিলেন হিজবুল্লাহ প্রধান সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ।

এদিকে, হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিনও নিরাপদে রয়েছেন বলে ইরানের তাসনিম বার্তা সংস্থা জানিয়েছে। এটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, দখলদার সেনাদের সর্বশেষ সন্ত্রাসী হামলায় কোনো হিজবুল্লাহ কমান্ডার শহীদ হননি।

শুক্রবার বিকেলে ইসরাইলি হামলায় বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীর অন্তত ছয়টি ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়। ইসরাইলি সামরিক রেডিও জানিয়েছে, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে এসব হামলা চালানো হয় এবং এতে পাঁচ হাজার পাউন্ডের বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ব্যবহার করা হয়।

ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, বৈরুতে সর্বশেষ পাশবিকতা চালানোর আগে মার্কিন সরকারকে অবহিত করেছে তেল আবিব। লেবাননের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি ইসরাইলিদের দৌরাত্ম ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।