আর্কাইভ | ঢাকা, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ৫ জামাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ ১০:৩৩:৩২ অপরাহ্ন
Photo
বিশেষ প্রতিবেদক
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
২১ আগস্ট ২০২৪
০৯:০৭:০৫ পূর্বাহ্ন

আহমদ হোসেন, বদি, তাজুল, সোহায়েল আটক; আ'লীগের আরও যারা গ্রেফতার 


আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বন্দরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোয়াহেলকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

খবর বিবিসি বাংলার। 

মঙ্গলবার রাতে তাদেরকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

তবে তাদেরকে কোন মামলায় গ্রেফতার আটক করা হয়েছে সেটি এখনো নিশ্চিত করেনি পুলিশ।

একই রাতে চট্টগ্রাম থেকে আটক হয়েছেন কক্সবাজারের আলোচিত সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিও। তাকে আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান- র‍্যাব।


গত পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার একজন উপদেষ্টা, সরকারের শীর্ষ সাবেক দু’জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতা আটক হয়েছে।

আটকের পর তাদের কেউ কেউ রিমান্ডে আছে, কোনো কোনো নেতাকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।

তবে, সরকার পতনের এর অনেক আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ বিগত সরকারের অনেক মন্ত্রী কিংবা পুলিশের আলোচিত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এখনো পলাতক অবস্থায় রয়েছে।

যাদের অনেকেরই বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হত্যা মামলা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন মামলায় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।


এক রাতে আটক তিন সাবেক এমপি
মঙ্গলবার রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলামকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি দল রাজধানীর বনশ্রী থেকে আটক করে। নেয়া হয় ডিবি হেফাজতে।

মি. ইসলাম ২০০৮ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি ১৯৯৬ সালে একই আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন।

২০০৯ সালের শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রিসভার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। একই সঙ্গে তিনি দলটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন।

একই এলাকা থেকে আটক করা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে। তিনি দ্বাদশ সংসদে নেত্রকোনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৪ সালের পাঁচই জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মি. বদি।

এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসা ও পাচারের অভিযোগ বহু পুরোনো। তাকে নিয়ে নানা বিতর্কের পর গত একাদশ সংসদে উখিয়া টেকনাফ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তার স্ত্রী শাহীন আক্তার।


বরখাস্তের এক দিন পর আটক সোহায়েল
রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল সর্বশেষ ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান।

গত বছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান মি. সোহায়েল। এর আগে তিনি ছিলেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।

সোমবার রাতে নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় মি. সোহায়েলকে।

মূলত বিগত দুই বছর সাবেক এই নৌবাহিনী কর্মকর্তা বন্দরে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান বা র‍্যাব কর্মকর্তা হিসেবে।

২০১০ সাল থেকে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‍্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের ডিরেক্টর ছিলেন এই নৌবাহিনী কর্মকর্তা।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছিল তাদের মধ্যে এই র‍্যাব কর্মকর্তাও ছিলেন।

মঙ্গলবার রাতে তাকে বনানীর বাসা থেকে আটকের পর নেয়া হয়েছে ডিবি হেফাজতে। তবে তাকে কোন মামলায় আটক দেখানো হয়েছে সেটি এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি।


আটক আওয়ামী লীগের যেসব প্রভাবশালীরা
বাংলাদেশের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ১৪ই অগাস্ট রাতে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

পরেরদিন রাতে রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকা থেকে আটক করা হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ তাদের আটকের পর জানায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাদেরকে আটক করা হয়েছে।

আর সোমবার রাতে বারিধারা এলাকা থেকে আটক করা হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনিকে।

একই রাতে আটক করা হয় আওয়ামী লীগ সরকারে সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়কে।

মঙ্গলবার আদালতে আনা হলে তাদের দুজনকেই রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলের নেতা, বিচারক, সরকারি আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৬২৬ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

সেখানে জানানো হয়, বিভিন্ন অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে আশ্রয়গ্রহীতাদের চারজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ইতোমধ্যেই হস্তান্তর করা হয়েছে।

বাকিরা নিজ নিজ উদ্যোগে সেনাবাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেছে বলেও জানায় আইএসপিআর।