ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ - ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে -সিএসই সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (২৮ অক্টোবর) সূচকের বড় পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে।
এদিন ডিএসইতে আগের কার্যদিবসের চেয়ে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বাড়লেও সিএসইতে কমেছে। একইসঙ্গে ডিএসই ও সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম কমেছে।
সোমবার সকাল থেকেই উভয় পুঁজিবাজারে দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পুরনো ভবনের সামনে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। অপরদিকে, দুপুর ২টার দিকে পুঁজিবাজারে পতন রোধে তাৎক্ষণিক করণীয় হিসেবে ১০টি দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মানবন্ধন করেন।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৬৬.৮৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়া সূচক ২০.২৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৭ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ২৫.১০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮০৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ১০৫টি কোম্পানির, কমেছে ২৪৬টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৪৬টির।
ডিএসইতে এদিন মোট ৩৫৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ১১৯.০৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৪০৬ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৫.২৮ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৮২১ পয়েন্টে, শরিয়া সূচক ১৬.৪২ পয়েন্ট কমে ৮৯২ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৯৫.৭৭ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৫০৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সিএসইতে ১৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৫২টি কোম্পানির, কমেছে ১২৬টির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৪টির।
দিনশেষে সিএসইতে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
দুপুরে মানববন্ধনকালে পুঁজিবাজারে পতন রোধে তাৎক্ষণিক করণীয় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক নূরুল ইসলাম মানিক তাদের ১০টি প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।
বিনিয়োগকারীদের সংগঠনটির দাবিগুলো হলো
বর্তমান মার্কেট পরিস্থিতির কারণে গেইন-ট্যাক্স দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
বর্তমান মার্কেট পরিস্থিতির কারণে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে (তদন্ত ও অসময়ে জেড গ্রুপে প্রেরণ ইত্যাদি)। কোম্পানিগুলোর শেয়ারে কোনো ক্যাটাগরি থাকবে না (যেমন: এ- বি -জেড ইত্যাদি)। কোম্পানিগুলোকে আয়ের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে।
ব্যাংক, ফাইন্যান্স, ইন্স্যুরেন্স, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও আইসিবিসহ পুঁজিবাজারে তাদের যতটুকু বিনিয়োগ করার কথা, তা শতভাগ কার্যকর করতে হবে। এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড মার্কেটে (ইটিএফ) দ্রুত বিনিয়োগ করতে হবে। কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম শেয়ার ধারণ ৩০ শতাংশ অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।
বিএসইসি’র দায়িত্ব অন্তত ১০টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজার বিনিয়োগ নিয়ে আসা। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পর পর দুই বছর লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হলে তার বোর্ড পুনর্গঠন করতে হবে। ফোর্স সেল বন্ধ করতে হবে।
বিক্ষোভকালে বিনিয়োগকারীরা বলেন, ২০১০ সালেও আমরা এতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, যা গত আড়াই মাসে হয়েছি। ২০১০ সালের শেয়ারের দাম কমে ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে শেয়ারের দাম ফেসভ্যালু ১০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। এতে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।
তারা বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা ঠিক মতো জীবন-যাপন করতে পারছি না। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ওপর আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু বর্তমান বিএসইসির কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নাই। তাই আমরা দ্রুত বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছি।
বিনিয়োগকারীরা আরও বলেন, আমরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে এসেছি। গত দুই মাসের টানা দরপতনের ফলে আমাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের ৭০ শতাংশ কমে গেছে। আমরা সবাই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেছি। আমরা এখানে ভিক্ষা করতে আসি নাই। আমরা নিজের পুঁজি বিনিয়োগ করতে এসেছি, যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। অথচ সেই পুঁজি হারিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব।