আর্কাইভ | ঢাকা, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬ ০৮:৪৯:২১ অপরাহ্ন
Photo
মুফতি পিয়ার মাহমুদ   
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
০৯:১৯:১১ পূর্বাহ্ন

যৌতুক প্রথা ও ইসলাম


আজকের সমাজে অতি পরিচিত ও বহুল আলোচিত একটি শব্দের নাম যৌতুক। যৌতুক বাংলা শব্দ। এর প্রতিশব্দ হলো পণ। বিয়ে উপলক্ষে কন্যা বা কন্যার পরিবারের পক্ষ থেকে বরকে প্রদেয় অর্থ-সম্পদকে যৌতুক বলে। বিয়ের সব আলোচনার সাথে সমাজের একটি বড় অংশে আলোচনা হয় যৌতুক নামের এই ‘দেনা-পাওনা’ নিয়ে। এই দেনা-পাওনার আলোচনাটি অনেক সময় হয় একদম শুরুতেই বর-কনে পছন্দের আগে। কখনো-সখনো বর-কনে পছন্দের পর। বহু পরিবারে বিয়ের ক্ষেত্রে এটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ নিয়ে হয় বিস্তর দরকষাকষি।

 

দর মনমতো হলে থাকে না কালো আর সুন্দরের তফাৎ। যেন দেনা-পাওনাটাই বিয়ের প্রধান ও মুখ্য বিষয়। বর-কনের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি গৌণ। যৌতুক নামের এই ‘আজব’ দেনা পাওনার অক্টোপাসে আবদ্ধ আমাদের সমাজ। বহু মুসলিম রমণীর জীবন আজ দেনা-পাওনার অভিশাপের জালে আটক যাচ্ছে। শুরুতে অন্য সম্প্রদায়ের প্রভাবে মুসলিম সমাজে যৌতুক প্রথার অনুপ্রবেশ ঘটলেও এখন আর এতে প্রভাব প্রতিক্রিয়ার কিছু নেই। এটি এখন স্বাভাবিক একটি লেনদেন ও দেনা-পাওনার হিসাবে পরিণত হয়েছে।

বহু কবিরা গোনাহর সমষ্টি যৌতুক : যৌতুক গ্রহণ দৃশ্যত আর্থিকভাবে লাভজনক হলেও এর মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো অন্যায় ও অপরাধ। এর প্রতিটি অপরাধই এত জঘন্য ও ভয়ঙ্কর যে, একজন মানুষ জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যেকোনো একটি অপরাধ করাই যথেষ্ট। যৌতুকের সবচেয়ে নিকৃষ্ট দিক হলো, এটি একটি হিন্দুয়ানি প্রথা। কোনো মুসলিম কোনো অবস্থাতেই কাফের সমাজের রীতি-রেওয়াজ অনুসরণ কল্পনায়ও আনতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে ব্যক্তি সে জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে’ (আবু দাউদ-২/৫৫৯, আহমদ-২/৫০)। যৌতুকের আরেকটি অপরাধ হলো জুলুম। আর এ জুলুম শুধু ব্যক্তির হয় না। এই জুলুমের শিকার হয় গোটা পরিবার ও বংশ। যৌতুকের কারণে কনেপক্ষ যে মানসিক পীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয় তা তো বর্ণনার অতীত। অথচ কাউকে সামান্যতম কষ্ট দেয়াও কবিরা গুনাহ-হারাম। হাদিসে এসেছে, আবু সিরমা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করে, আল্লাহও তার ক্ষতি করেন। আর যেব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দেয় আল্লাহও তাকে কষ্ট দেন’ (আবু দাউদ-২/৫১২, বুখারি-২/১০৫৯, তিরমিজি-২/১৫)।


অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আবু বকর সিদ্দিক রা: বলেন, রাসূলে করিম সা: বলেছেন, ‘অভিশপ্ত সেই ব্যক্তি যে কোনো মুমিনের ক্ষতি করে বা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে’ (তিরমিজি-২/১৫)। পাঠক লক্ষ করুন, হাদিস দু’টির মর্মবাণী কত কঠোর ও ভয়ঙ্কর। যে অন্যকে কষ্ট দেয় স্বয়ং আল্লাহ তাকে কষ্ট দেবেন। যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দেয় সে অভিশপ্ত। যে ব্যক্তি অভিশপ্ত এবং যাকে মহান আল্লাহ কষ্ট দেবেন তার চেয়ে ভাগ্যাহত ও নিকৃষ্ট এই পৃথিবীতে কে হতে পারে? যৌতুকের আরো একটি ভয়াবহ অপরাধ হলো- এতে অবৈধ উপায়ে অন্যের সম্পদ গ্রাস করা হয়। কারণ বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। এটি ব্যবসায় বা অর্থ উপার্জনের উপায় নয়। এভাবে বর-কনে ব্যবসার পণ্য নয় যে, তাদেরকে বিক্রি করে অর্থোপার্জন করা যাবে। কুরআন মাজিদে একাধিকবার আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘তোমরা অবৈধ উপায়ে একে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না’ (সূরা বাকারা-১৮৮, সূরা নিসা-২৯)।


আলোচ্য আয়াতের মর্মার্থ হলো- এমন কোনো পন্থায় অর্থোপার্জন অবৈধ, যাকে আল্লাহ তায়ালা উপার্জনের মাধ্যম বানাননি। বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন- এটি ব্যবসায় বা সোর্স অব ইনকাম নয়। একইভাবে বর-কনেও ব্যবসার কোনো পণ্য নয় যে, তাদেরকে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা হবে। সুতরাং যারা বিয়ের মতো একটি পবিত্র বন্ধনকে সোর্স অব ইনকাম বা অর্থ উপার্জনের উপায় বানায়, নিঃসন্দেহে তারা মহান স্রষ্টা আল্লাহর হুকুম অবজ্ঞা ও লঙ্ঘনকারী এবং রহমতের নবীর ভাষায় ‘হজের মহিমান্বিত দিবসে পবিত্র’ কাবা শরিফে হামলাকারী’ (বুখারি-১৭৩৯, মুসলিম-১৬৭৯)। এ ছাড়াও যৌতুকে রয়েছে ডাকাতি ও লুটতরাজের মতো ভয়াবহ ও নিকৃষ্ট অপরাধ। ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে ফেলে অর্থ আদায় করে থাকে, আর বরপক্ষ আদায় করে থাকে নব পরিণীতা অবলা নারীকে অস্ত্র বানিয়ে। পার্থক্য এতটুকুই। আর কে না জানে, অন্যের সম্পদ লুট করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। (তথ্যসূত্র: নয়া দিগন্ত)