আর্কাইভ | ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ ১০:৪৫:০১ অপরাহ্ন
Photo
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
০১ মার্চ ২০২৩
০৭:৫৮:২৪ পূর্বাহ্ন

ইবিতে  ছাত্রী নির্যাতন, পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে  বহিষ্কার, হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার 


কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। বুধবার ( ১ মার্চ) দুপুর আড়াইটায় ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়। এদিকে ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ (প্রভোস্ট) শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলাপরিপন্থি, অপরাধমূলক ও সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী, কর্মী তাবাসসুম ইসলাম, ইসরাত জাহান মিম, হালিমা খাতুন উর্মী ও মুয়াবিয়া জাহানকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলো। 

এদিকে ঘটনার পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ২৬ ফেব্রæয়ারি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এর তিনদিন পর বুধবার জড়িত ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তরাসহ পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই হলের প্রভোস্ট ড. শামসুল আলমকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে ইবির হলগুলোর সিসিটিভি মনিটরিং বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিক আরাফাত বলেন, অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে ছাত্রলীগে কারও স্থান হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। আমরা কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। বহিষ্কারাদেশ স্থায়ী নাকি অস্থায়ী জানতে চাইলে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, আমাদের উৎসগুলো থেকে তথ্যের ভিত্তিতে বহিষ্কার করেছি। এ ঘটনায় সবার সংশ্লিষ্টতা আছে এটা নিশ্চিত। এখন অপরাধ কতটুকু এটা তো বিবেচ্য বিষয়। এখানে তাদের ভুল বা অন্যায় যেটাই হোক তার গভীরতার ভিত্তিতে বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হবে। এটা স্থায়ীও হতে পারে, অস্থায়ীও হতে পারে। গত ১২ ফেব্রæয়ারি ইবির দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। অভিযোগ ওঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তারা ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করে তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখেন।  

হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার: ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ (প্রভোস্ট) শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর দ্রæত তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ১৪ মাস ধরে শামসুল আলম দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্টের দায়িত্বে ছিলেন। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, হাইকোর্ট থেকে বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অধ্যাপক শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে অধ্যাপক আহসানুল হক সাময়িকভাবে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন।

দুপুরে ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার (সাসপেন্ড) করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল আলমকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। ঘটনাটি নিয়ে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশসহ আদেশ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদন দেখে হাইকোর্ট বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদনগুলোর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন ও বিধিবিধান অনুসারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। 

সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে সব ধরনের শিক্ষার কার্যক্রম থেকে ‘সাসপেন্ড’ করতে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শৃঙ্খলাবিষয়ক কার্যধারার প্রয়োজনে তাদের ডাকা যাবে। সানজিদা চৌধুরী ছাড়া অপর চার ছাত্রী হলেন হালিমা আক্তার, ইসরাত জাহান, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান। এ ছাড়া হাইকোর্ট ওই ঘটনার সময় ফুলপরীর ভিডিও ধারণকারী শিক্ষার্থী হালিমার মোবাইল ফোন উদ্ধার এবং ধারণ করা ভিডিও সংরক্ষণ করে আদালতে দাখিল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।