ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি প্রতিনিধিদলকে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ইসরায়েল শান্তিপ্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি ‘উগ্রতা’ প্রদর্শন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ। জর্ডানের রাজধানী আম্মানে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
খবর রয়টার্সের
সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মিশর, বাহরাইন ও জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তারা সবাই আরব রাষ্ট্রগুলোর একটি বিশেষ যোগাযোগ কমিটির অংশ হিসেবে রামাল্লায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের এই সফরটি হলে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো শীর্ষ সৌদি কর্মকর্তার পশ্চিম তীর সফর করতেন।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পশ্চিম তীরে আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রবেশে বাধা দিয়ে ইসরায়েল প্রমাণ করেছে, তারা শান্তির যেকোনো প্রকৃত প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করছে। এ আচরণ আমাদেরকে আন্তর্জাতিক পরিসরে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করতে উৎসাহিত করেছে।
এর আগে শনিবার ইসরায়েল জানায়, রোববার (১ জুন) যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, যাতে জর্ডান, মিশর, সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রীরা অংশ নিতেন- সেই বৈঠক হতে দেওয়া হবে না।
ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ‘উসকানিমূলক’ এক বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচার।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি বলেন, এই সফর আটকে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল আবারও প্রমাণ করেছে, তারা ন্যায়সংগত ও বিস্তৃত কোনো আরব-ইসরায়েল সমাধানের সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করছে।
আগামী ১৭ থেকে ২০ জুন নিউইয়র্কে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের সহ-সভাপতিত্বে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি আলোচনায় আসবে বলে জানা গেছে।
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলাত্তি বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির পর কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে টিকিয়ে রাখার জন্য পুনর্গঠন পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়গুলো এই সম্মেলনে আলোচনার বিষয় হবে।
ইসরায়েলি আরব পার্লামেন্ট সদস্য আয়মান ওদে বলেন, আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল গাজা যুদ্ধের অবসান, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা জোরদার এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রূপরেখা তৈরি করতে সৌদি আরব ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে জাতিসংঘের উদ্যোগকে সমর্থন।
তিনি সৌদি মালিকানাধীন আল-আরাবিয়া টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সৌদি-ফরাসি এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক পরিসরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি পাওয়ার পথে সহায়ক হতে পারে, যা ইসরায়েল সরকারের বর্তমান নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আয়মান ওদে আরও বলেন, ইসরায়েলি সরকার মনে করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষই ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভিত্তি। এ কারণেই তারা এই সফর আটকে দিয়েছে, যাতে কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ না দেওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধানে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক প্রস্তাবের পক্ষে জাতিসংঘ ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ দিন দিন চাপ বাড়াচ্ছে, যার অধীনে ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।