এবার কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে জোগান বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার। দেশি জাতের পেঁয়াজে ঠাসা ভোগ্যপণ্যের দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজারটির আড়তগুলো। গত বছরের তুলনায় এবার দামও নেমেছে প্রায় অর্ধেকে। মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এবার ১৩-২৫ টাকা, রসুন ৭০-৮০ টাকা, আদার দাম ১০০-১৮০ টাকা কম।
খবর জাগো নিউজের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি। আবার বেচাকেনাও কম। তাই দাম কমেছে।
কোরবানিতে মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার চাহিদা বেশি থাকে। খাতুনগঞ্জের বাজারে বিগত বছরগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজের আধিক্য থাকলেও এবার পুরোপুরি দেশি পেঁয়াজের দখলে বাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে ৩২ লাখ টনের মতো। চাহিদার চেয়ে বেশি দেশে উৎপানও হয়। তবে উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে বড় অংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এতে চাহিদার অবশিষ্ট পেঁয়াজ আমদানি করতে হয় ভারত, মিয়ানমার থেকে।
দেশে বছরে রসুনের চাহিদা রয়েছে প্রায় ছয় লাখ টনের মতো। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টন রসুন দেশে উৎপাদিত হয়। অবশিষ্ট রসুন আমদানি করতে হয়। আমদানি করা রসুনের ৯৫ শতাংশের বেশি আসে চীনা থেকে। খাতুনগঞ্জের বাজারে দেশি রসুন পাওয়া গেলেও আধিক্য রয়েছে আমদানি করা চীনা রসুনের।
তাছাড়া দেশে বার্ষিক আদার চাহিদা তিন লাখ টন। এর মধ্যে অর্ধেকের মতো আদা আমদানি করতে হয়। বর্তমানে বাজারে চায়না আদার পাশাপাশি ভারতীয় কেরালা জাতের আদা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর দুই দেশের বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ না এলেও বাংলাদেশে ঢুকছে ভারতীয় আদা।
সরেজমিনে রোববার (২৫ মে) খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই ঘুরে দেখা যায়, খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো পেঁয়াজ-রসুনে ভর্তি। ট্রাক থেকেও নামছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পেঁয়াজ। একইভাবে বন্দর থেকে খালাস হয়ে আড়তে ঢুকছে চায়না রসুন ও আদা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম কম। তবে দাম কম হলেও বেচাকেনা বাড়েনি। খাতুনগঞ্জের মেসার্স জামেনা ট্রেডিংয়ের পরিচালক মো. আজগর হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে দেশিয় ‘দেশাল’, ‘হালি’ ও ‘খাসখালী’ জাতের পেঁয়াজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ‘দেশাল’ জাতের পেঁয়াজের মান অনেক ভালো। রোববার দেশাল জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। খাসখালী বিক্রি হয়েছে ৪৫-৪৭ টাকায়। চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১৫-১১৬ টাকা। চায়না আদা প্রতি কেজি ১১০-১১২ টাকা। কেরালা জাতের আদা বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮২ টাকায়। বাজারে ক্রেতা অনেক কম। বেচাকেনাও কম।
হামিদ উল্লাহ মিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবু তৈয়্যব বলেন, ‘বাজারে বর্তমানে সবগুলোই দেশি পেঁয়াজ। দেশি পেঁয়াজ গুণগত মানে আগের ভারতীয় পেঁয়াজকে হার মানিয়েছে।’
চাক্তাইয়ের আড়তদার ব্যবসায়ী মেসার্স বশর অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারে বেচাকেনা কম। গতবছর কোরবানির আগে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫৮ থেকে ৭৫ টাকায়। এবার ৫০ টাকার নিচে। গত বছর চায়না রসুন ছিল ১৭০ টাকা। এবার একই রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১২-১১৫ টাকায়। অথচ এগুলোর আমদানি খরচ পড়েছে ১৫০ টাকা। প্রতি কনটেইনার রসুনে ১০-১২ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আদার অবস্থাও একই। বাজারে চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১২ টাকায়। একই আদা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৩শ টাকা। একইভাবে কেরালা আদা বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা। গত বছর এসব আদাও ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।’
এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় বন্ধ। এখন ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৮-১০ রুপির মতো। এসব পেঁয়াজ এলে এখানে দাম আরও কমে যেত।’