আর্কাইভ | ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জামাদিউস সানি ১৪৪৬ ০৫:৩১:২২ অপরাহ্ন
Photo
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
১৬ অক্টোবর ২০২৪
০৪:০৬:১৯ পূর্বাহ্ন

ভুয়া সাংবাদিকের দাপটে অতিষ্ঠ সমাজ সেবার কর্মকর্তারা  


তিনি কখনো ব্যবসায়ী কখনো সাংবাদিক পরিচয় দেন। আবার পরিচয় দেন বৈষম্য বিরোধ আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে। তার কথা না শুনলে চলে আসে চাকরি খাওয়ার হুমকি। নাম মহসিন দিনু। সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্লাকমেইল আর অর্থ আদায় করাই তার পেশা।  নিজেকে বাংলা টিভির সাংবাদিক পরিচয় দিলেও বাংলা টিভি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এই নামে তাদের কোন সাংবাদিক নেই। সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজিই ও ব্ল্যাকমেইল করাই তার পেশা। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনুর লক্ষ্য সরকারি বিভিন্ন কেনাকাটায়। ক্রয়ে দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে সে ব্যাপারে প্রতিবেদন করার হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করেন তিনি। এ ছাড়াও অফিস পরিচালনা ব্যায় বাবত যে অর্থ সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেখানেও দুর্নীতি হয় উল্লেখ করে তিনি চঁদাদাবী করেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, অফিস পরিচালনার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যায়ের বিষয়ে বাইরের কারও জানার কথা নয়। অধিদপ্তরের ভেতর থেকেই কেউ না কেউ তাকে এসব তথ্য দিচ্ছে। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে অধিদপ্তরের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা তার সঙ্গে ব্লাক মেইল চক্রে জড়িত। তার চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা। এরপর থেকেই তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে দিনু। 

সমাজসেবা অধিদপ্তরের নাম প্রকাশেঅনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি ‘আন্দোলন সমন্বয় ‘ পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি সমাজসেবার অতিরিক্ত পরিচালকের কক্ষে যান। সন্দেহ হলে তিনি সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া ব্যক্তদের নাম পরিচয় জানতে চান। কিন্তু আশানরূপ তথ্য না পেয়ে তিনি পরিচয় জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন। আকতার জানান, ওই ব্যক্তিরা ‘সমন্বয়ক’ ছিলেন না। এমনকি আন্দোলনের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

সমাজসেবার ওই কর্মকর্তা তার চাঁদাবাজির উদ্দেশ্য বাঁধ সাদেন জেনেই পিছে লাগেন দিনু। ফোন দিয়ে দিতে থাকেন হুমকি। দিনু দাবি করেন, অফিস পরিচালনা ব্যায় বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাট হয়েছে। বাড়াবাড়ি করলে চাকরি খেয়ে ফেলবেন। 
এদিকে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার অংশ হিসেবে গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ৩০-৪০ জন ব্যক্তি  ‘শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন’ শিরোনামের একটি ব্যানার নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। তারা মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল এবং অতিরিক্ত পরিচালক মোহাঃ কামরুজ্জামান-এর তাৎক্ষণিক পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসে তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করেন। 

সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামালকে ওএসডি করা হলেও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত হননি। এজন্য সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার নির্দেশনায় তিনি মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া অতিরিক্ত পরিচালক মোহাঃ কামরুজ্জামান অধিদপ্তরে সকল সরকারের সময়েই একজন সৎ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে অপসারণ চেয়ে স্লোগান দেয়ার ঘটনাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

সমাজসেবার একাধিক কর্মকর্তা জানান, মহসিন দিনুর কথায় ছাত্র নামধারী কিছু ব্যক্তি কার্যালয়ে এসে মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। তাকে গালিগালাজ করে এবং পরে আবারও যাবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এখন মহাপরিচালক অফিস করলেও এ ব্যাপারটি জনপ্রশাসন কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার। যারা বিক্ষোভ করছেন, তারা জনপ্রশাসন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারেন। কিন্তু অফিসে এসে হুমকি-ধামকি দিতে পারেন না।

তারা আরও বলেন, মহাপরিচালক করে সরানো গেলে মহসিন দিনুরা অর্থ হাতিয়ে নিতে পারবেন। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যেতে চায় তাদেরকে বসানো সহজ হবে। এজন্য বিক্ষোভের নাটক সাজিয়ে মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালককে সরানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের সাথে যোগ দিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করছেন মহসিন দিনু। তাদের ঘনিষ্ঠরা পদে বসলে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি করা সহজ হবে। এরই মধ্যে এই বিক্ষোভের ব্যাপারে শেরেবাংলা নগর থানায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি অবহিতকরণ চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।

জানা গেছে, ‘জনতার গোয়েন্দা’ নামের একটি অনলাইন পোর্টাল চালান মহসিন দিনু। যার প্রকাশক তার স্ত্রী আয়েশা মহসিন ও সম্পাদক তিনি নিজেই। এই পোর্টালের মাধ্যমেই অসত্য সংবাদ প্রকাশ করে সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় কাজ না করলেও ঢাকা শহরের আন্ডারগ্রাউন্ড গণমাধ্যমে কাজ করে অপকর্ম চালান তিনি। ‘জনতার গোয়েন্দা’ নামের অনলাইন পোর্টালটিও এরই একটি অংশ। অন্যদিকে নিজেকে এটিএন বাংলা, এনটিভি, বাংলাটিভি, আরটিভিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক দাবি করলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব সংবাদমাধ্যমের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।