ইসরায়েলের হামলায় লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে গোষ্ঠীটি। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এক বিবৃতিতে লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠীটি বলেছে, তারা গাজার সমর্থনে এবং লেবাননের প্রতিরক্ষায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মোকাবিলা চালিয়ে যাবে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) আজ সকালে এক বিবৃতিতে জানায়, গতকাল শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ও দক্ষিণ ফ্রন্টের কমান্ডার আলী কারকি ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, আইডিএফ ও ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থার তথ্য মতে যুদ্ধবিমানগুলি বৈরুতের দাহেহ এলাকায় একটি আবাসিক ভবনের মাটির নীচে অবস্থিত হিজবুল্লাহর কেন্দ্রীয় সদর দফতরে হামলা চালায়। ওই হামলায় তিনি নিহত হন।
আইডিএফ জানায়, হাসান নাসরুল্লাহ৩২ বছরের শাসনামলে অনেক ইসরায়েলি বেসামরিক ও সৈন্যকে হত্যা এবং হাজার হাজার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য দায়ী ছিলেন। এছাড়াও তার নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী হামলায় বিভিন্ন দেশের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছিল। নাসরাল্লাহ ছিলেন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এবং সংগঠনের কৌশলগত নেতা।
"হাসান নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ৮ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে যোগ দেয়। তারপর থেকে, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের নাগরিকদের ওপর তার চলমান আক্রমণ চালিয়ে লেবাননকে উত্তেজনার দিকে নিয়ে যায়।"- আইডিএফ বলছে।
ওই বিবৃতিতে আইডিএফ, ইসরাইল রাষ্ট্র এবং এর জনগণের জন্য যারা হুমকি তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাবে বলেও ঘোষণা দেয়।
শাহাদাতের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেছেন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ: হিজবুল্লাহর বিবৃতি
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে গতকাল (শুক্রবার) ইহুদিবাদী ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেছেন এবং তিনি তাঁর চূড়ান্ত অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন।
লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ আজ (শনিবার) এক বিবৃতিতে তাঁর শাহাদাতের খবর নিশ্চিত করেছে। হিজবুল্লাহর পূর্ণ বিবৃতিটি নিম্নরূপ:
“সুতরাং যারা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে বিক্রয় করে তাদের আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা উচিত। বস্তুতঃ যে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে, অতঃপর সে নিহত হবে অথবা বিজয়ী, আমি তাকে শীঘ্রই মহা পুরস্কার দান করব।” [সূরা নিসা: আয়াত ৭৪]
মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন।
আমাদের মহান শিক্ষক, প্রতিরোধ আন্দোলনের পথিকৃৎ, আল্লাহর একনিষ্ঠ সৎ বান্দা, সাহসী নেতা, প্রজ্ঞাবান ঈমানদার, দূরদর্শী ও মুমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে শাহাদাতের সুমহান কাফেলায় যোগ দিয়েছেন। এ যেন নবী-রাসূল ও শহীদ ইমামগণের পদতলে ঈমানের ঐশী যাত্রায় এক আলোকিত কারবালা।
লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করার মাধ্যমে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছৈ গেছেন। তিনি প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শহীদদের পথ ধরে অগ্রসর হয়েছেন এবং এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একের পর এক বিজয় উপহার দিয়েছেন। তিনি ১৯৯২ সালে প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
২০০০ সালে ইহুদিবাদীদের কবল থেকে লেবাননের মুক্তি থেকে শুরু করে ২০০৬ সালের ৩৩ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিজয় তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে। গত প্রায় এক বছর ধরে গাজার নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনিই লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলনকে ইসরাইল বিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।