ছাত্রদের সঙ্গে কতিপয় পুলিশ সদস্যের অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে বাহিনীতে সংস্কার দাবি করেছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের প্যাডে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ পুলিশের কর্মরত ইন্সপেক্টর থেকে অধস্তন কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন।
এতে যেকোনো সংকটে-সংগ্রামে বাংলাদেশ পুলিশ দেশবাসীর পাশে থাকবে জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ পুলিশের অধস্তন অফিসার। আমরা প্রথমেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব সৈনিককে অভিনন্দন জানাই দেশ থেকে স্বৈরাচার উৎখাত করার জন্য। এই আন্দোলনে নিহত প্রতিটি ছাত্র ভাইয়ের রুহের মাগফিরাত কামনা করি, আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। ’
চাকরিজীবনে তারাও বৈষম্যের শিকার দাবি করে বলেন, ‘দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত হয়েছে। তাই আজ কথা বলার সুযোগ পেয়ে আবারও সব ছাত্র-জনতাকে বাংলাদেশ পুলিশের অধস্তন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে রক্তিম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, রাষ্ট্র যে আইন তৈরি করে তা বাংলাদেশ পুলিশের মধ্যমে রাষ্ট্র প্রয়োগ করে থাকে। আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে রোষের সৃষ্টি হয়।
আমরা প্রকৃতপক্ষে নিয়োগের শুরু থেকেই সার্জেন্ট, সাব-ইন্সপেক্টরসহ নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সিনিয়র অফিসারদের অথবা রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থ হাসিলের বাহক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হই, সেটি বৈধ হোক আর অবৈধ হোক, যেকোনো আদেশই পালন করতে হয়।
আমাদের অফিসাররা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দলীয় পরিচয়ে দুষ্ট। আমরা বর্তমান কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ যেকোনো আন্দোলনে কোনো সাধারণ মানুষকে সরাসরি গুলি করতে না চাইলেও সেটি বাধ্য হয়ে করতে হয় দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য। আমাদের দেশবাসীর কাছে ভিলেনে রূপান্তরিত করা হয়। আমরা কোটা সংস্কারের মতো পুলিশ বাহিনীর সংস্কার চাই।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আমরা আপনাদের সাথে মিলেমিশে থাকতে চাই, কোনোভাবেই বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্কে জড়াতে চাই না। পুলিশ বাহিনী হিসেবে নিরীহ ছাত্রদের সাথে যে অন্যায় করেছে তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।
এতে আরো বলা হয়, আমরা প্রতিটি পুলিশ সদস্য আপনাদেরই কারো না কারো ভাই-বোন-বন্ধু-বাবা-মা বা আত্মীয়স্বজন। আমরাও আপনাদের সমাজেরই অংশ। দেশের যেকোনো বিপদে অতীতের মতোই আপনাদের পাশে পাবেন। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশ। আমাদের কোনো সদস্য কোনো অন্যায় কাজ করে থাকলে তার অবশ্যই বিচার হবে। দেশের এই সুসময়ে আমরা আমাদের কাছে থানা-ফাঁড়ি ও পুলিশি স্থাপনার নিরাপত্তা চাই। পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা চাই।
গত ৫ আগস্ট সাড়ে চার শরও অধিক থানা আক্রান্ত হয়েছে। এগুলো আপনাদেরই সম্পদ, দেশের সম্পদ। প্রতিটি পুলিশ সদস্যের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মবিরতি ঘোষণা করছি। আমরা বৈষম্যহীন পুলিশ বাহিনী চাই। পুলিশ বাহিনীর সংস্কার চাই। দেশের সবাই এই সুসময়ে একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।
তারা বলেন, আপনারা জানেন সারা দেশে শত শত পুলিশ ইতোমধ্যে শাহাদাতবরণ করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এগুলো কোনো ছাত্রদের কাজ নয়। নিঃসন্দেহে কোনো দুষ্কৃতকারীদের কাজ। দেশবাসী আমাদের, অর্থাৎ পেশাগত বাহিনী পুলিশকে তাদের শত্রু মনে করে। আমরা পুলিশ জনগণের সেবক। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ এই পুলিশ বাহিনীই করেছিল। যেকোনো সংকটে-সংগ্রামে আমরা সবসময়ই দেশবাসীর পাশে আছি।