মধ্যপ্রাচ্যে এখন একটি কথাই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের স্বপ্নের বলি হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। আরব এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর জোরালো অবস্থান ছাড়া একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এই অঞ্চলের অন্যতম নেতৃস্থানীয় দেশ সৌদি আরব যেন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা থেকে সরে এসেছে। মার্কিন অস্ত্র কেনার খায়েশই কী তাহলে সৌদি আরবকে তার লক্ষ্য থেকে সরিয়ে দিয়েছে?
মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবকে আরব বিশ্বের নেতা মনে করা হয়। কিন্তু গেল কয়েক বছরে, সৌদি আরব তার সেই অবস্থান হারিয়েছে। অপেক্ষাকৃত তরুণ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠার পর, ভিন্ন এক সৌদি আরব দেখছে বিশ্ব। যে সৌদি আরব, এক সময় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জোরালো সমর্থক ছিল, এখন কেবল বিবৃতি দিয়েই কাজ সারে দেশটি। তাই সাত মাস ধরে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের নির্বিচার গণহত্যায়ও এতটুকু টলেনি রিয়াদ।
ইসরায়েলের দীর্ঘ দিনের আকাঙ্ক্ষা মধ্যপ্রাচ্যের ‘বিগ ফিশ’ সৌদি আরবকে গিলবে। এজন্য মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয়েছে তেল আবিব। আর রিয়াদের স্বপ্ন হচ্ছে, মার্কিন অস্ত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দানব হবে। তবে সৌদির সেই স্বপ্নের পথে কাটা ফিলিস্তিন। কেননা, অস্ত্র কেনা-বেচার এই চুক্তিতে সৌদি আরবকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের শর্ত জুড়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই গাজায় গণহত্যা দেখেও দ্বিধাগ্রস্ত সৌদি, সাইডলাইন থেকে সবকিছু দেখছে।
ওয়াশিংটনে বসে থাকে নিজের মালিকদের কথাই শুনছে না তেল আবিব। সেক্ষেত্রে উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের কথায় পাত্তা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন সৌদি আরবের ভালো মানুষের মুখোশ খুলে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, সৌদি আরব কি কখনও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সমর্থক ছিল। রিয়াদের এমন ধোঁয়াশাপূর্ণ অবস্থান, গাজায় দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত ঠেকানো এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাস্তা কঠিন করে দিয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতার, মিশর এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতকে যতটা তৎপর দেখা গেছে, সেই অর্থে পেছনের বেঞ্চে বসেছিল সৌদি আরব। বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সৌদির এমন নীরবতা অবাক করা নয়। কেননা, রিয়াদের বর্তমান নেতৃত্ব বাইরের দেশে কী ঘটল, তার চেয়ে নিজ দেশের বিষয়াবলী নিয়েই বেশি চিন্তিত। তাই গেল বছর ফক্স নিউজকে সৌদি যুবরাজ অকপটেই জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন খুব নিকটে।
ওই সাক্ষাৎকারের সাত মাসের বেশি সময় পর, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে দেশের মধ্যেই বিরোধিতার মুখে পড়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। একটি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবের ৯৬ শতাংশ মানুষ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের বিরোধী। এরপরই সৌদির সরকারি গণমাধ্যমেরও সুর বদলে যায়। এমনকি সম্প্রতি ওয়াশিংটনকে জানানো হয়, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে না রিয়াদ।