ঢাকা: লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে তুচ্ছ ঘটনায় আবু ইউনুস মো. শহিদুন্নবী জুয়েল নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় রুজু হওয়া তিনটি মামলায় ওই মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীসহ আরও ৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ।
এর আগে ৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে মোট ১০ জন আসামি গ্রেফতার হলো।
পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত বলেন, জুয়েল নামের ওই ব্যক্তিকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ছাই করার ঘটনায় হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এসব মামলায় রবিবার (১ নভেম্বর) আরও ৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে হত্যা মামলায় বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীও রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত মোট ১০ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হলেও ৫জনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্ত বুড়িমারী বাজারের একটি মসজিদে জামাতে আসরের নামাজ আদায় করেন রংপুর থেকে আগত আবু ইউনুস মো. শহিদুন্নবী জুয়েল। তবে মানসিক সমস্যা থাকায় মসজিদ থেকে সব মুসল্লি চলে গেলেও এক বন্ধুসহ তিনি রয়ে যান এবং মসজিদের খাদেমকে হুট করে র্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মসজিদের ভেতর অস্ত্র আছে, খুঁজতে হবে বলতে থাকেন। খাদেম তাকে খুঁজে পেলে নিয়ে যান বললে তিনি মসজিদে তল্লাশি শুরু করেন।
এসময় মসজিদের বাইরে থেকে কয়েকজন ব্যক্তি এসে কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে জুয়েলকে মারতে থাকেন। এ খবর স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি বাইরে থাকায় একজন মেম্বারকে ডেকে নিতে বলেন। এরপর একজন মেম্বার এসে জুয়েল ও তার বন্ধুকে মারধর করে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে গেলেও ততক্ষণে এ ঘটনা ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম, ফোন ও মুখে মুখে রটে যায়।
এর ফলে চারপাশ থেকে মানুষ ছুটে আসতে থাকে। তারা ইউনিয়ন পরিষদের দরজা ভেঙে জুয়েল ও তার সঙ্গীকে ধরে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় ইউএনও, ওসি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে গেলেও তারা কেবল জুয়েলের সঙ্গীকে উদ্ধার করতে পারেন। জুয়েলকে উদ্ধারের চেষ্টার সময় তাদেরকেও উন্মত্ত জনতা ধাওয়া দেয়।
এরপর ১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেও জনতার উন্মত্ততাকে ঠেকানো যায়নি। অনুমানের ওপর ভর করে কোরআন অবমাননার অভিযোগ এনে এবং বাকি সবাই অন্ধের মতো সে কথা বিশ্বাস ও মনগড়াভাবে নানা কথা রটিয়ে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করে।
এরপর তারই মোটর সাইকেলে আগুন দিয়ে তার দেহ সে আগুনে ছুড়ে মারে। আগুন নেভার পর জুয়েলের শরীরের মাত্র চারটি হাড় সেখান থেকে উদ্ধার হয়। পরে গোয়েন্দা সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থার তদন্তে জানা যায় সেখানে কোরআন অবমাননার মতো কোনও ঘটনাই ঘটেনি।