শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শাসন আমলে টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদের দেশত্যাগের সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই উত্তাল দেশের রাজনীতি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাদের জামিন, অবাধে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া ও আবার সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করার পেছনে অনেকেই উপদেষ্টাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এই অবস্থায় এতদিনেও আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে না পারা ও দলটিকে নিষিদ্ধ করতে না পারার পেছনে ছাত্র উপদেষ্টাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এবার ফেসবুক পোস্টে যার জবাব দিয়েছেন ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া ফেসবুকে পোস্টে মাহফুজ একটি দলকে বেশি ভরসা করার কথা জানান। সরাসরি ওই দলের নাম না নিয়ে তিনি বলেন, সবার আগে উনাদের সঙ্গেই পরামর্শ করেছি। ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব। সব দোষ এখন ছাত্র উপদেষ্টা নন্দঘোষ!
তথ্য উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো যুগান্তর পাঠকদের জন্য-
কয়েকটি কথা
একটি দলের এক্টিভিস্টরা বারবার লীগ নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ছাত্ররা রাজি ছিল না, এটা বলে বেড়াচ্ছেন। মিথ্যা কথা। ক্যাবিনেটে প্রথম মিটিং ছিল আমার। আমি স্পষ্টভাবে এ আইনের অনেকগুলো ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। নাহিদ-আসিফও আমার পক্ষে ছিল স্বভাবতই। দল হিসাবে বিচারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হলে একজন উপদেষ্টার জবাব ছিল ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মত পশ্চাৎপদ উদাহরণ আমরা আমলে নিতে পারি কিনা। এ যুক্তি যিনি দিয়েছিলেন, একটি দলের এক্টিভিস্টরা আজ সমানে তার পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রদের কুপোকাত করতে। অথচ, উনার সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। মিছে বিরোধ লাগানোর অপচেষ্টা করে কোন লাভ নেই।
বলে রাখা ভালো, দুজন আইন ব্যাকগ্রাউন্ডের উপদেষ্টা ( একজন ইতোমধ্যে মারা গিয়েছেন) ও আমাদের বক্তব্যের পক্ষে ছিলেন। সংস্কৃতি উপদেষ্টাও পক্ষে ছিলেন। গতকাল বিকালে কথা হয়েছে। দল হিসাবে লীগের বিচারের প্রভিশন অচিরেই যুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন উক্ত উপদেষ্টা। উনাকে ধন্যবাদ।
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন। ঘোষণাপত্র নিয়ে আপনাদের দুই মাস টালবাহানা নিয়ে আমরা বলব। ছাত্রদের দল ঘোষণার প্রাক্কালে আপনারা দলীয় বয়ানের একটি ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন। সমস্যা নেই, আমরাও চাই সবাই স্বীকৃত হোক। কিন্তু, এখন সেটাও হতে দিবেন না। দোষ আমাদেরও কম না। আমরা আপনাদের দলীয় প্রধানের আশ্বাসে আস্থা রেখেছিলাম।
পুনশ্চ: আমরা নির্বাচন পেছাতে চাইনা। ডিসেম্বর টু জুনের মধ্যে নির্বাচন হবেই।
আপনারা যদি মনে করেন, ছাত্ররা নিজেদের আদর্শ ও পরিকল্পনা নিতে পারেনা বরং এখান থেকে ওখান থেকে অহি আসলে আমরা কিছু করি, তাহলে আপনারা হয় ছাত্রদের খাটো করে দেখছেন, নয়তো ছাত্রদের ডিলেজিটিমাইজ করার পরিকল্পনায় আছেন। সেই আগস্ট থেকেই আমরা জাতির জন্য যা ভালো মনে করেছি, সবার পরামর্শ নিয়েই করেছি। বরং, উক্ত দলকেই আমরা বেশি ভরসা করেছি। সবার আগে উনাদের সাথেই পরামর্শ করেছি। ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব। সব দোষ এখন ছাত্র উপদেষ্টা নন্দঘোষ!
আমরা উক্ত দলকে বিশ্বাস করতে চাই। উক্ত দলের প্রধানকে বিশ্বাস করতে চাই। উনি আমাদের বিশ্বাসের মূল্য দিয়ে লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে ও ঘোষণাপত্র প্রকাশে দেশপ্রেমিক ও প্রাগমাটিক ভূমিকা রাখবেন বলেই আস্থা রাখি। উক্ত দলকে নিয়ে কে কি বলবে জানি না কিন্তু আমরা চাই উক্ত দল ছাত্রদের সাথে নিয়ে দেশের পক্ষে, অভ্যুত্থানের শত্রুদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐকমত্যের নেতৃত্ব দিক। দেশপ্রেমিক ও সার্বভৌমত্বের পক্ষের শক্তি হিসাবে নেতৃত্ব দিলে ছাত্ররা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় উনাদের সাথে চলবেন।
ঐক্যবদ্ধ হোন। নেতৃত্ব দিন। এ প্রজন্মকে হতাশ করবেন না। এ প্রজন্ম এ দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ।
আ.লীগকে কারা নিষিদ্ধ চায় আজকের সমাবেশেই বোঝা যাবে: হাসনাত
রাজনৈতিক দল হিসেবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে কারা নিষিদ্ধ করতে চায় সেটি আজকের সমাবেশ থেকেই বোঝা যাবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
শুক্রবার (৯ মে) সকাল সাড়ে আটটার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাসনাত বলেন, ফোয়ারার সামনে মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছে। বাদ জুমা জনসমুদ্র হবে সেখানে। আজকে সবাই বুঝতে পারবেন কারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায়।
দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নিবন্ধন বাতিল করে নিষিদ্ধ করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবো না।
এ সময় হাসনাত বলেন, ‘ফোয়ারার সামনে থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের যে রাস্তা রয়েছে, যেই রাস্তা বাংলামোটর পর্যন্ত গিয়েছে, পুরো রাস্তা আজকে জনসমুদ্রে পরিণত করব।’
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘জুমার পর ছাত্রজনতা ফোয়ারার সামনে অবস্থান নেবে। ফয়সালা করেই আমরা ঘরে ফিরব। কারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় আর কারা চায় না তা আজ ফয়সালা হবে।’ বাদ জুমা সব নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে সারাদেশের জনগণকে জুলাই আন্দোলনের মতো রাজপথে নেমে আসার আহ্বানও জানান হাসনাত। পরে ফেসবুক পোস্টেও সেই কর্মসূচির কথা জানান হাসনাত।
হাসনাত তার পোস্টে লিখেছেন, বাদ জুমা যমুনার সামনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।’
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শাসন আমলে টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদের দেশত্যাগের সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই উত্তাল দেশের রাজনীতি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে বিক্ষোভ চলছে।