ভারতের আহমেদাবাদে ২৪২ আরোহী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় কেউ বেঁচে নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। খবর এনডিটিভির।
লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এটি দেশটির অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বিমানটি লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। বিমানটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, একশোরও বেশি মৃতদেহ, যেগুলোর অধিকাংশই আগুনে পুড়ে গেছে, সেগুলো স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, যে ভবনের ওপর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি চিকিৎসকদের হোস্টেল। আমরা এরই মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এলাকা পরিষ্কার করেছি এবং বাকিটাও দ্রুত পরিষ্কার করা হবে।
ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, বিমানটির বিভিন্ন অংশ ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বিমানের লেজ ভবনের ছাদে আটকে রয়েছে।
ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন নিউজ-১৮ জানায়, বিমানটি রাজ্য-চালিত বি.জে. মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের খাবার কক্ষের ওপর বিধ্বস্ত হয়, এতে বহু মেডিকেল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
রয়টার্সকে একটি সূত্র জানায়, বিমানে ২১৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক, ১১ শিশু এবং ২ নবজাতক ছিল। এয়ার ইন্ডিয়ার মতে, যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডীয় নাগরিক ছিলেন।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ জানিয়েছে, বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের, যা বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক যাত্রীবাহী বিমান হিসেবে পরিচিত।
অ্যাভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্ক ডাটাবেস অনুযায়ী, ২০১১ সালে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করা ড্রিমলাইনারের এটিই ছিল প্রথম দুর্ঘটনা। বিমানটি ২০১৩ সালে প্রথম উড্ডয়ন করে এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এয়ার ইন্ডিয়ার বহরে যুক্ত হয়। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ভারত ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী শোকপ্রকাশ করেছেন।
বিমান দুর্ঘটনায় মোদির শোক প্রকাশ
গুজরাটের আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দরের বাইরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে মোদি লিখেছেন, "আহমেদাবাদের এই দুর্ঘটনা আমাদের হতবাক ও দুঃখিত করেছে। এটি এমন এক হৃদয়বিদারক ঘটনা যা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।’’
"এই দুঃখের মুহূর্তে, বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি আমি সমবেদনা প্রকাশ করছি।’’
মোদি আরও লিখেছেন, "ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি।”
বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিতে ২৪২ আরোহী ছিলেন। গুজরাট থেকে লন্ডনগামী বিমানটির বহু যাত্রী হতাহত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরমধ্যে জানা গেছে বিমানটি আছড়ে পড়েছে একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে। যেখানে এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা থাকতেন। বিমান সরাসরি ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ায় অনেক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বিমানটি কলেজের ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ার পর সেখানে হৃদয়বিদারক ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যেই একাধিক শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
তবে স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ দুর্ঘটনায় অনেক তরুণের প্রাণ গেছে। মূলত তিনি ওই ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “আহমেদাবাদের ইতিহাসে এটি অন্যতম একটি কালো দিন। আমরা এত তরুণের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি।”
প্রধান উপদেষ্টার শোক, পাশে থাকার আশ্বাস
ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে পাঠানো এক শোক বার্তায় তিনি এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
শোক বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘আহমেদাবাদে ২৪২ জন যাত্রী বহনকারী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানের দুর্ঘটনার খবরে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক সহানুভূতি ও সমবেদনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দুঃসময়ে আমরা ভারতের জনগণ ও সরকারের পাশে আছি। প্রয়োজনে সব ধরনের সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত।’