দিনাজপুরের নাড়াবাড়ি এলাকার সখী ভবেশ চন্দ্র রায়কে (৫৫) পিটিয়ে হত্যা করা হয়নি বলে তদন্ত ও পুলিশ সংশ্লষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ভিকটিম তবেশ চন্দ্রে রায় এর স্ত্রীর ভাষ্য মতে, গত ১৭ এপ্রিল বিকেল অনুমান ৫ টা থেকে রাতের যে কোনো সময় প্রতিবেশী যুবক ১। মো. রতন পিতা- আব্দুস সাত্তারের সং-শহর গ্রাম ২। আখতারুল ইসলাম ও আতিক, পিতা- আব্দুল কাদের সাং- বাসুদেবপুর ও মোঃ রুবেল ইসলাম পিতা- মোঃ আব্দুল সাত্তার ও মুদ্রা ইসলাম, পিতা- আব্দুল মাজেদ, সং- নরসিংপাড়া দুটি মোটরসাইকেলযোগে ভবেশের বাড়িতে আসে। একসাথে নাড়াবাড়ি হাটে যাবার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। এবং আতিক বয়সে তবেশের চেয়ে অন্তত ১৫-১৮ বছরের ছোট হলেও তারা নিয়মিত একসাথে আড্ডা দেন, হাটে যান এবং ভবেশের বাড়িতে নিয়মিত তাদের যাওয়া আসা ছিলো। নিহতের শ্যালক ফুলবাবু, ছেলে স্বপন চন্দ্র এবং স্থানীয় ফুলবাড়ী হাটের অনেকেই সাথে কথা বলে বিষয়টি সম্পর্কে জানা যায়। এছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দা ভাগ্যবান (২৫) পিতা- অনিল চন্দ্র রায়, - বাসুদেবপুর ও আফসার পিতা-মোসলেম উদ্দিন সং-কাটাহারি জানান যে, আতিক, রতন ও ভিকটিম ভবেশ মাঝে মধ্যে একসঙ্গে মাদক সেবন করত। মানকের কারনে ভিকটিম ভবেশের অনেক সম্পত্তি খোয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় নাড়াবাড়ি বাজারে দুধ হাটিতে রতন-আতিক-রুবেল মুন্না ও ভবেশ চন্দ্র একসাথে অহিদুলের দোকানে চা পান করেন। শনিবার দুপুরে চা বিক্রেতা (অহিদুল ও তার ছেলে হেলাল) এর সাথে আলাপকালে তিনি পুলিশকে জানান, ভবেশসহ আরও কয়েকজন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার এখানে চা পান করেন। চা পান কলে তারা স্বাভাবিক ছিলো এবং তাদের মধ্যে কাউকে শারীরিক ভাবে অসুস্থ মনে হয় নাই। চা খেয়ে পাশের দোকান থেকে পান ও সিগারেট যায়।
কিছুক্ষন পরে হাটখোলার একটি ঘরের খুঁটিতে হেলান দেন ভবেশ। পরে হয়তো মাথা ঘুরে যায়। সেখানে বসে পড়ে। পান দোকানদার মতিবর রহমান (৫২) এর সাথে কথা বললে সে জানান ভিকটিম খরের, চুন ও কাঁচা সুপারি দিয়ে আমার কাছ থেকে পান নিয়েছিল। পান খাওয়ার একপর্যায়ে ভিকটিম পানের দোকানের সামনে হাটখোলার একটি ঘরের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে পড়েন। এসময় তাঁর সাথে থাকা কয়েকজনসহ স্থানীয়রা ধরাধরি করে পাশেই লিটন ডাক্তারের(পল্লী-চিকিৎসক) দোকানে নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান ডাক্তার প্রথমে তাঁর প্রেসার মেপে দেখেন প্রেসার নীল হয়ে গেছে। পরে তাঁর সাথে থাকা অন্যান্যরা ভ্যানে তুলে মেডিকেলে নিয়ে যায়। ভ্যান চালক সাদ্দাম হোসেনের সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি জানান যে, এশার নামাজের সময় পল্লী-চিকিৎসক লিটনের দোকান হতে ভিকটিমকে আমার জান গাড়িতে তুলে নাড়াবাড়ি বাজারের শেষ মাথায় ডা. আব্দুর রহমানের (পত্নী-চিকিৎসক) চেম্বারে নিয়ে গিয়ে ভবেশের প্রেসার মাপান ও অভিকরা। ডা. আব্দুর রহমান এর ছেলে সোহেল রানা (৩২) (তিনিও পল্লী-চিকিৎসক) তাদেরকে দ্রুত মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এরইমধ্যে রতন ভবেশের ছেলে স্বপনকে ফোনে তাঁর বাবার অসুস্থতার কথা জানান। যা স্বপন নিজেও স্বীকার করেছেন। মুঠোফোনে স্বপন রতনকে বলেন, তার বাবাকে বাড়িতে রেখে আসার জন্য। নাড়াবাড়ি বাজার থেকে ফুলবাড়ী হাট প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটারের দূরত্ব। ওই একই ভ্যান গাড়িতে ফুলবাড়ি হাটে এসে পল্লী চিকিৎসক ডা. কৃষ্ণ চন্দ্রের দোকানে আবারও ভবেশকে লেখান তার সাথের (রতন, আতিক, মুন্না ও রুবেল) লোকজন। ডা. কৃষ্ণ চন্দ্র দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আবারও ভবেশের ছেলে স্বপনকে জানান তার বাবা গুরত্বর অসুস্থ। সে যেন শহর থেকে একটি এম্বুলেন পাঠিয়ে দেয়। রাত আটটায় ভবেশের ছেলে স্বপন শহর থেকে একটি এম্বুলেন্স নিয়ে ফুলবাড়ী হাটে আসেন। ততক্ষণে ভবেশের স্ত্রী ও শ্যালক সেখানে উপস্থিত হন। তারা অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত ৯টা ১৮ মিনিটে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসিজি পরীক্ষা করে ভবেশকে মৃত ঘোষনা করলে ভবেশকে নিয়ে বাড়িতে আসেন স্বজনরা।
রাত পৌনে বারোটায় তবেশের পরিবার থেকে বিরল থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। জানানো হয় যে, সুস্থ মানুষটাকে রতন ও আতিক নিয়ে গেলো। তিন ঘন্টায় মানুষটা মারা যায় কিভাবে। তাদের সন্দেহ হয়। রাত সাড়ে বারোটার পুলিশ বাসুদেবপুরে প্রবেশের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সুরতহাল করেন। নিহত প্রবেশের গায়ে কোথাও কোন মারপিট কিংবা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তদুপরি যেহেতু সন্দেহের দৃষ্টি হয়েছে ওপরেক্ষিতে বিরল থানা পুলিশ বিষয়টি গুরত্বের সঙ্গে নিয়ে ভিকটিমের মরদেহ পোস্ট মর্টেমের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে হাসপাতালের কার্যক্রম শেষে ভিকটিমের পরিবার মৃতদেহ গ্রহণ করে অভেনক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এ ঘটনা পুলিশ গুরত্বের সাথে বিবেচনা করে সার্বিক তদন্ত কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে।