আর্কাইভ | ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২, ১৭ শা‍ওয়াল ১৪৪৬ ০৭:১০:৪৯ পূর্বাহ্ন
Photo
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
১৩ এপ্রিল ২০২৫
১০:২৭:০৭ পূর্বাহ্ন

বরিশালে ইলিশের আকাল 


পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বরিশালের বাজারে ইলিশের আকাল চলছে। তবে বাজারে যে ইলিশ আসছে তার দাম আকাশ ছোয়া। আর একই সময়ে ইলিশ সংরক্ষণ সপ্তাহ চললেও বাজারে দেখা মিলছে জাটকা ইলিশের। বরিশালের বাজারে কেজি প্রতি ইলিশ ৩ হাজার টাকা দরে চলছে, যা মন প্রতি চলছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এলসি মাছের কেজি ২৪ শ’ টাকা যা মন প্রতি ১ লাখ টাকা। আধা কেজির মাছ ৬৫ হাজার টাকা মন বিক্রি হচ্ছে। 


ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে ইলিশের আকাল চলছে। এর মধ্যে বৈশাখকে কেন্দ্র করেই ইলিশের চাহিদা বেশি ফলে মূল্যটাও অনেকাংশে বেশি। তবে পহেলা বৈশাখের পর মাছের দাম কিছুটা কমবে। 

বরিশাল পোর্ট রোড মৎস্য পাইকারী মৎস্য বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে পহেলা বৈশাখ ও প্রথম রমজান একই দিন ছিল। এরপরে আরও দুটি পহেলা বৈশাখ রমজানের মধ্যে পালিত হয়। গত বছর ঈদুল ফিতরের দুদিন পর পহেলা বৈশাখ হওয়ায় দুটি উৎসব একাকার হয়ে গিয়েছিল। এসব কারণে গত ৪টি বাংলা বর্ষবরণে ছিল না পান্তা-ইলিশের আয়োজন। ইলিশের দামে প্রভাবও ছিল না।


আর মাত্র একদিন পর বর্ষবরণ উৎসব। এক সপ্তাহ আগে থেকে বাজারে ইলিশের সংকট দেখা দিয়েছে। যা পাওয়া যাচ্ছে, সেটা সাধারণের কেনার ক্ষমতার মধ্যে নেই। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রকারভেদে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা।

বরিশাল পোর্ট রোড ও বরগুনার পাথরঘাটার ইলিশ মোকামের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ৫টি অভয়াশ্রমে ইলিশ আহরণে ১ মার্চ থেকে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে এক সপ্তাহ আগে মোকামে ইলিশ সরবরাহ কমেছে। যতটুকু আসছে সেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের জন্য কিনে আড়তদাররা মজুত করছেন। আর একই সঙ্গে চলছে ইলিশ সংরক্ষণ সপ্তাহ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকামে গত দুদিন ধরে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ আড়াই হাজার টাকা, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজন ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজন ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা আরও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন।


এখানকার বিসমিল্লাহ আড়তঘরের মালিক নাসির উদ্দিন ও প্যাদা মৎস্য আড়তঘরের মালিক হিরাজ প্যাদা বলেন, এক সপ্তাহ ধরে মোকামে ২০ থেকে ৩০ মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এর পরিমাণ ছিল অর্ধশতাধিক মণ। সরবরাহ কমার সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ছে। ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে। রাজধানীতে অনেক চাহিদা থাকলেও সংকটে সরবরাহ করতে পারছেন না। বরগুনার পাথরঘাটা মোকামের অবস্থা পোর্ট রোডের চেয়েও খারাপ বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) পাথরঘাটার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ শিকদার বলেন, সারাদেশে ইলিশ সংকট। গত এক মাসে পাথরঘাটা মোকামে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৯ মণ। সাগরে ৩০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। মোহনাসংলগ্ন বলেশ্বর ও বিষখালী নদীতে পাওয়া ইলিশ বৈশাখ উপলক্ষে খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। এর দাম অনেক চড়া। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকা। 

পাইকারি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, তিন মাস ধরে ইলিশ কিনে ফ্রিজে মজুত করেছিলেন। এখন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তা সরবরাহ করছেন। পাথরঘাটার সব পাইকারি ব্যবসায়ী এ কৌশল করেছেন।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম বলেন, ইলিশের জন্য কিছুদিন আগে সাগরে ট্রলার পাঠিয়েছিলেন। প্রত্যেকটি ট্রলার শূন্য হাতে ফিরেছে। এ কারণে কেউ সাগরে ট্রলার পাঠাচ্ছে না।

পোর্ট রোড বাজারের ব্যবসায়ী জহির সিকদার বলেন, এখন যে দামই থাকুক না কেন পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশের দাম আরও বাড়বে। কারণ ইলিশ মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে যে মাছ পাওয়া যায়, তা স্থানীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এ সংকট কাটবে না। আরও বাড়বে। তাই এবার বৈশাখ উপলক্ষে ভারতে মাছ পাঠানোর চিন্তা করাও উচিত হবে না।

ইলিশ মাছ কিনতে এসে সাইফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, দাম জিজ্ঞেস করে আমি ‘থ’ হয়ে গেছি। আধা কেজি ওজন সাইজের মাছের দাম প্রতি কেজি এক হাজার ১০০ টাকা চায়। পাল্টা দাম বলার কোনো সুযোগও নেই বলে বিক্রেতারা জানাচ্ছেন। দাম শুনে ইলিশ খাওয়ার শখ মিটে গেছে।

বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত যেকোনো মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকবে। এ ছাড়াও বর্তমানে নদীতে ইলিশ মাছ কম আসছে। মাছ কম ধরা পড়ায় দাম বেশি। সামনে জোয়ার আছে, মেঘ বৃষ্টি হলে নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে।