দেড় দশক আগে বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম গুমের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সোমবার (১০ মার্চ) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে চৌধুরী আলমের ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী হিমু এই অভিযোগ দেন।
অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন- সাবেক সেনা কর্মকর্তা সোহায়েল (রিয়ার অ্যাডমিরাল হিসেবে বরখাস্ত), কর্নেল মো. মুজিবর, তৎকালীন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পরে লে. জেনারেল (বরখাস্ত) রিয়াজুল ইসলাম, তৎকালীন ওসি শেরে বাংলা নগর থানা, মেজর এরশাদ, তৎকালীন র্যাব-২ এর উপ-অধিনায়ক, খান মো. আকতারুজ্জামান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নিসার উদ্দিন আহমেদ কাজল, কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের প্রধান নিয়ন্ত্রক আফজাল হোসেন, মহানগর বিজনেস অ্যাসোসিয়েটসের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান হুজুর, মহানগর বিজনেস অ্যাসোসিয়েটসের সেক্রেটারি আব্দুল বাসেত মাস্টার, ফুলবাড়ীয়া সুপার মার্কেটের সভাপতি শাহজাহান খান, বঙ্গ কমপ্লেক্স, ফুলবাড়ীয়ার সভাপতি মো. শাহজাহান, মীর আল মামুন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফুলবাড়ীয়া টার্মিনাল সংলগ্ন মার্কেটের উপ-পরিচালক ইসমাইল হোসেন বাচ্চুসহ অজ্ঞাত আরো অনেকে।
অভিযোগটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী রেজিস্ট্রিভুক্ত করে অভিযোগ আনা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। ২০১০ সালের ২৪ জুন চৌধুরী আলম নিখোঁজ হন। এরপর তার আর খোঁজ মেলেনি। ওয়ান-ইলেভেনের পর চৌধুরী আলমের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দায়ের হয়।
ওই সময় গ্রেপ্তার হয়ে টানা ২৭ মাস কারাভোগ করেন তিনি। কারাগার থেকে যখন বের হন তখন তার বয়স ছিল ৬৭। এরপর শিকার হন গুমের।
প্রসঙ্গত: ২০১০ সালের ২৫ জুন গুমের শিকার হন তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর (বর্তমান ঢাকা দক্ষিণের ২০) ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম। তাকে ফার্মগেট ইন্দিরা রোড থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও তার খোঁজ পাননি পরিবার। কেউ জানে না তিনি জীবিত আছেন নাকি মৃত।
চৌধুরী আলম বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই বছর জেলে ছিলেন তিনি। এরপর তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করা হয়।
পরিবারের অভিযোগ, ২০১০ সালের ২০ জুন গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে র্যাব পরিচয়ে কয়েকজন চৌধুরী আলমের ওপর হামলা করে। পরে স্থানীয়রা র্যাব-১-এর বিল্লাল নামে এক সদস্যকে ধরে গুলশান থানায় সোপর্দ করে। সেদিন রাতেই র্যাব সদর দফতর বিল্লালকে তাদের জিম্মায় নিয়ে যায়। এরপর ২৫ জুন রাতে ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে এসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আলমকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তখন তার গাড়িচালককে মারধর করে গাড়িও নিয়ে যায় তারা।