প্রধান উপদেষ্টার প্রতি শায়খ আহমাদুল্লাহর খোলা চিঠি
আর্কাইভ | ঢাকা, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬ ০৩:৫৮:০৫ পূর্বাহ্ন
Photo
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
০৮:২৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

প্রধান উপদেষ্টার প্রতি শায়খ আহমাদুল্লাহর খোলা চিঠি


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছেন বিশিষ্ট দাঈ, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে পোস্ট করা চিঠির বিষয়বস্তু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর প্রতি কটূক্তি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান।’

শায়খ আহমাদুল্লাহর খোলা চিঠিটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-


মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,
আমি বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক ও সাধারণ মুসলিম হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনার সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ইসলাম ধর্ম, মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত রাসূল (সা.)-এর প্রতি কটূক্তি ও অবমাননাকর মন্তব্য করে চলেছে। একের পর এক এ ধরনের ঘটনা দেখে একে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত, দুরভিসন্ধিমূলক, অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে।

বিশেষভাবে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন কমিটির একজন সদস্যের বিরুদ্ধে জনগণের ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের ক্ষেত্রে তার বিতর্কিত ভূমিকা জনমনে সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সাম্প্রতিক আপত্তিকর ও উস্কানিমূলক ফেসবুক পোস্ট আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে।


একই ধরনের কর্মকাণ্ড পৌনঃপুনিক হওয়ায় দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে যৌক্তিক ক্ষোভ, তীব্র অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছে। এই ক্ষোভের স্ফূরণ ঘটলে দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। সেরকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আন্তরিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আশু কর্তব্য। এ ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনলে তা জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেবে।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,
সব সমাজেরই কিছু আদর্শ ও মূল্যবোধ থাকে। তা রক্ষা করা, তাকে সম্মানের চোখে দেখা, নিদেনপক্ষে তাকে অবজ্ঞা না করাই সামাজিক রীতি এবং সাংবিধানিক কর্তব্য। বাংলাদেশের এক শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত এর উল্টোটাই করে চলেছে। এ কারণে এ দেশে বারবার অস্থিরতা তৈরি হয়। নতুন বাংলাদেশে এর পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে একটি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। আবু সাঈদসহ অভ্যুত্থানের শহীদদের অধিকাংশই ছিলেন ধার্মিক। এই বিপ্লবে ইসলামপ্রিয় মানুষদের আত্মত্যাগ ও ভূমিকা ছিল মুখ্য। ইসলাম ধর্মের সাম্যের বাণী তাদেরকে আন্দোলনের প্রেরণা যুগিয়েছে। এজন্য এই সরকারের প্রতি ধর্মপ্রাণ জনগণের প্রত্যাশা অনেক। আশা করি—সরকার জনপ্রত্যাশার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে, মানুষের আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে, সরকার এরকম পদক্ষেপই গ্রহণ করবে, যা দেখে মানুষ সরকারের প্রতি আস্থা ধরে রাখতে পারবে। মানুষ যদি দেখে তাদের আবেগ-অনুভূতিতে নিয়মিত আঘাত করা হচ্ছে, জন-প্রত্যাশাকে পদদলিত করা হচ্ছে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জনগণকে উস্কে দেয়া হচ্ছে কিন্তু সরকার তা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না—তাহলে তারা সরকারের প্রতি আস্থা হারাবে। দেশের মানুষ যদি সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রতি আস্থা হারায়, তাহলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। অতএব সময় থাকতেই এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব প্রয়োজন।

আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রত্যাশা করি—সরকার জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে শ্রদ্ধা করবে, ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, ধর্ম অবমাননার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে সরকারি কোনো প্রকল্পে যুক্ত করবে না, যুক্ত করে থাকলে বরখাস্তপূর্বক শাস্তির আওতায় আনবে এবং এ ধরনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হিসেবে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন করবে।

অতএব,
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিনীত অনুরোধ—অনতিবিলম্বে এই ধরনের কটূক্তি ও অবমাননাকর কর্মকাণ্ড বন্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং দেশবাসীকে এই মর্মে আশ্বস্ত করুন যে, তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বিশ্বাস রক্ষায় সরকার সম্পূর্ণভাবে সচেষ্ট থাকবে।

মহান আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন এবং আপনাকে জাতির সেবায় নিয়োজিত রাখুন।

বিনীত
আহমাদুল্লাহ