সাংবাদিকদের মধ্যকার অনৈক্য, মতবিরোধ ও দালালিকে কাজে লাগিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যকে বারবার বিলম্বিত করেছে এবং এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসের আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোন অগ্রগতি হতে দেয়নি ।
তবে ২০২৪ সালের ৩৬ শে জুলাই গণ বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ফ্রান্সে অবস্থানরত বাংলাদেশি সাংবাদিকেরা ।
রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি হলরুমে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১৩ তম বর্ষ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্থানীয় প্রেসক্লাব আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন ।
ফ্রান্স বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের একাংশের সভাপতি ফেরদৌস করিম আখঞ্জীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেইন সাইফুলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় টেলিকনফারেন্সে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সাংবাদিক ইউনিয়ন ফ্রান্সের সভাপতি আব্দুল মান্নান আজাদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক অর্থ সম্পাদক ও কুইক নিউজ ২৪ সম্পাদক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, বহুধা বিভক্ত বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতা এনায়েত হোসেন সোহেল, আবু তাহের, নয়ন মামুন, রাসেল আহমদ, এন টিভি ফ্রান্স প্রতিনিধি আবুল কালাম মামুন, মিজানুর রহমান, মাজহারুল ইসলাম, কাওছার আহমদ, মাই টিভি প্রতিনিধি বাদল পাল, আবু তাহের, শাবুল আহমেদ, রাজু, ফ্রান্স বিডি নিউজ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রনি, দৈনিক আলোকিত সকালের বিশেষ প্রতিনিধি মামুন মাহিন, বাংলাভিশন ফ্রান্স প্রতিনিধি ইয়াসিন আরাফাত খোকন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন্নেসা রুনীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেনএমসি ইনস্টিটিউট এর প্রিন্সিপাল মাওলানা বদরুল বিন হারুন ।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অন্তর্বর্তী সরকার সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন ।
হত্যাকান্ডের জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার র এবং পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা জড়িত উল্লেখ করে আব্দুল মান্নান আজাদ বলেন, আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর বছরের পর বছর গড়ালেও হত্যা রহস্যের কিনারা হয়নি।
এখনো যেসব দালাল সাংবাদিক পরাজিত ফাসিস্টের দোষের হিসেবে ভারতের আনন্দবাজারের সুরে কথা বলছে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতি বক্তৃতায় ফেরদৌস করিম আখঞ্জী বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পেরিয়ে গেল। হত্যাকারীরা কি এতই শক্তিশালী যে তাদের কাছে রাষ্ট্র ও প্রশাসন পরাজিত হচ্ছে? নিশ্চয়ই এর পেছনে একটা রহস্য রয়েছে, না হলে কেন এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় এ পর্যন্ত ১১৫ বার পিছিয়েছে। রাষ্ট্রকেই সেই রহস্য উদঘাটন করতে হবে।
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন্নেসা রুনীর সঙ্গে পরিচয় এর কথা উল্লেখ করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক অর্থ সম্পাদক কামরুজ্জামান বলেন, তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে যে সত্য প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন, সেটা এতটা ভয়ানক ছিল কিংবা সরকারের গদি হয়তো বা পড়ে যেত সে কারণেই তাদেরকে হত্যা করা হয় এবং বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয় । ফ্রান্সের বহুধা বিভক্ত সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে ব্যক্তিগত স্বার্থ ভুলে একত্রিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি ।
পরাজিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক দালাল সাংবাদিকদের বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে মোসাদ্দেক হোসেইন সাইফুল বলেন, দালাল সাংবাদিকদের একটি বড় অংশ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে বাঁচাতে এবং বিচারকার্য ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য সাংবাদিকরা তাদের বক্তব্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানান ।
তারা এটাও আশা প্রকাশ করেন যে সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও নির্যাতনের সাহস দেখতো না এবং কোন সরকার ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার হওয়ার সাহসও পেত না ।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। ঘটনার সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের আলম।
গত ২৭ জানুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে ২ মার্চ ধার্য করেছেন আদালত। এ নিয়ে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ১১৫ বার পেছাল।