দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হয়েছে মঙ্গলবার। বেলা ১১টায় একযোগে এ ফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর পাস করেছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন শিক্ষার্থী, পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন নাফিসা হোসেন মারওয়া। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা যখন পরীক্ষার ফল নিয়ে উল্লাস করছেন, তখন নাফিসা চিরনিদ্রায় শায়িত।
জানা যায়, বাসায় না জানিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিতেন কলেজ শিক্ষার্থী নাফিসা। ১৭ বছর বয়সী এই কিশোরী আন্দোলনে সব সময় ছিল সম্মুখ সারিতে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট দুপুরে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন থানা রোডে পুলিশের গুলিতে মারা যায় সে। আজ মঙ্গলবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হলে জানা যায়, নাফিসা ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
মঙ্গলবার নাফিসার বাবা আবুল হোসেন সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়ের যাতে লেখাপড়া নষ্ট না হয়, সেই জন্য রান্না করতে দিতাম না। চায়ের দোকান দিয়ে যা দুই টাকা উপার্জন করেছি, মারওয়ার লেখাপড়ায় দিয়েছি। মেয়ে আমাকে না জানিয়ে ১৮ জুলাই থেকে উত্তরায় যেত আন্দোলনে। সারাদিন দোকানে থাকায় খোঁজ পেতাম না। প্রতিবেশীর কাছে জেনে মেয়েকে ঘরে আটকাই। আন্দোলনে যাওয়া নিয়ে খুব রাগ করেছিলাম। তবে মেয়ে আমাকে ফাঁকি দিছে। ৩ আগস্ট বলল, লেখাপড়া নেই, ঘরে থেকে দমবন্ধ লাগছে। সাভারে মামার বাসায় বেড়াতে যাবে। ভেবেছিলাম, সাভারে গেলে আন্দোলনে যাবে না।’
আবুল হোসেন বলেন, ‘সাভারের বক্তারপুরে মামার বাসায় গিয়ে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আবার আন্দোলনে যায়। ৪ আগস্ট দুপুরে মেয়েকে ফোন করলে গোলাগুলির শব্দ শুনি। মেয়ে তখন স্বীকার করে, আন্দোলনে আছে। আর পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট থানা রোডে যায় নাফিসা। তারপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ফোনে বলল, শেখ হাসিনা পলাইছে। আব্বু, আমি গণভবন যামু। আজ আমারে বাধা দিও না। আমি বললাম, শেখ হাসিনা পলাইছে, তাতে তর বাপের কী! তর বাপে করে চায়ের দোকানদারি।’
আবুল হোসেন বলেন, রাগ করে ফোন রেখে দিই। দুপুর ২টার দিকে মেয়ের ফোন থেকে এক ছেলে জানায়, আমার মেয়ের বুকে গুলি লাগছে। মেয়েটা সোয়া ২টার দিকে আমারে ফোন করে বলে, ‘আব্বু আমি মরে যামু। লাশটা নিও।’ এটাই মেয়ের শেষ কথা ছিল।
এবার এউচ্চ মাধ্যমিকে ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ২১, রাজশাহী বোর্ডে ৮১ দশমিক ২৪, কুমিল্লা বোর্ডে ৭১ দশমিক ১৫, যশোর বোর্ডে ৬৪ দশমিক ২৯, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭০ দশমিক ৩২, বরিশাল বোর্ডে ৮১ দশমিক ৮৫, সিলেট বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৩৯, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৫৬, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬৩ দশমিক ২২, মাদ্রাসা বোর্ডে ৯৩ দশমিক ৪০ এবং কারিগরি বোর্ডে ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস কেরছেন।
এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। আর ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। সেই হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৫৪৬ জন।