আর্কাইভ | ঢাকা, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬ ০৯:৪৯:২৬ অপরাহ্ন
Photo
বিশেষ প্রতিবেদক
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
১৭ আগস্ট ২০২৪
০৯:০৪:২২ পূর্বাহ্ন
আপডেটঃ
১৮ আগস্ট ২০২৪
০৪:৫৩:৩২ পূর্বাহ্ন

পিজিসিবিতে এখনো বহাল কে এই গাউছ মহিউদ্দিন? 


স্বৈরাচারী সরকারের কালো থাবা থেকে গত ১৫ বছরে রক্ষা পায়নি একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি (পিজিসিবি)। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এর অধীনে  থাকা  এই সংস্থাটি প্রায় তিন দশক যাবৎ বাংলাদেশের বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড এর বিনির্মাণ এবং সংরক্ষণের কাজ সফলভাবে করে আসলেও বিগত স্বৈরশাসনের আমলে বোর্ডের পরিচালকগন নানা অপকর্ম, আর্থিক লুটপাট, অবৈধ নিয়োগ এবং প্রদোন্নতি বাস্তবায়ন করে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 


গত ৮ বছরে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যের সরঞ্জাম ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট করা হয়েছে। আর উক্ত অর্থ চিহ্নিত দালালরা পাচার করে নিয়ে গেছে। এই অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার কাছে সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ লিখিত অভিযোগ দাখিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগে বলা হয়, পাওয়ার গ্রিড এর রোর্ডের  চেয়ারম্যান আবুল কালাম  আজাদ (সাবেক এমপি, জামালপুর-৫ ও তৎকালীন মুখ্য সচিব) এর  একতরফা নেতৃত্বে কোনো রকম কারিগরি গবেষণা ব্যতিরেকে বোর্ড সভায় বিবিধ আলোচনায় উত্থাপন করে সকল সঞ্চালন লাইনে কনভেনশনাল কন্ডাক্টর ব্যবহারের পরিবর্তে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যের সরঞ্জাম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ফলে গত ৮ বছরে উক্ত কন্ডাক্টর ব্যবহার করার মাধ্যমে দেশের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট করা হয়েছে। 


এছাড়া নিয়োগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়ার পরও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি এ কে এম গাউছ মহীউদ্দিন আহমেদকে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এমডি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মেধা তালিকার শীর্ষকে ডিঙ্গিয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ম্যানেজ করে পিজিসিবির এমডি পদটি বাগিয়ে নেন তিনি। এখনো তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। জানা গেছে, রাতারাতি তিনি এখন ভোল পাল্টিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এ জন্য তিনি  সাত দিনের ছুটিতে গেছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব মো: হাবিবুর রহমান একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি পিজিসিবির চেয়াম্যান হিসেবে এমডি নিয়োগ কমিটির সভাপতি ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী আমরা তিনজনের নাম প্রতিমন্ত্রীর নসরুল হামিদ বিপুর কাছে পাঠানো হয়েছিল। সুপারিশ করা হয়েছিল মেধা তালিকায় শীর্ষকে এমডি নিয়োগ দেয়ার জন্য। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী যিনি দ্বিতীয় হয়েছিল তাকেই এমডি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এখানে আমার কোনো এখতিয়ার ছিল না বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, পিজিসিবির এমডিকে সাত দিনের ছুটি দেয়া হয়েছে। কোনো অনিয়মের কারণে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, এমডি নিজেই ছুটি চেয়েছিলেন। 

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে, পিজিসিবির এমডি নিয়োগ দেয়ার জন্য গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি তিনটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এমডি নিয়োগ পাওয়ার জন্য ১৪জন আবেদন করেন। নিয়োগ কমিটি প্রাপ্ত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে ৯ জনের আবেদন গ্রহণ করে তাদের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রার্থী নির্বাচনের জন্য বাছাই পদ্ধতি নির্ধারণ এবং বাছাই পরীক্ষা আয়োজনের জন্য নিয়োগ কমিটির সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী পিজিসিবির পরিচালক পর্ষদ গত বছরের ১৫ এপ্রিল নির্ধারণ করে। নির্ধারিত দিনে প্রার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষায় ৯ জনই উপস্থিত ছিলেন।

প্রার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণের পর চূড়ান্ত মেধা তালিকা নির্ধারণ করা হয়। এমডি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন পিজিসির প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদ খান। আর দ্বিতীয় হয়েছিলেন পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম গাউছ মহীউদ্দিন আহমেদ। আর তৃতীয় হয়েছিলেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী সাইদ একরাম উল্লা। এমডি নিয়োগ কমিটি ৯ জন প্রার্থীর ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাতালিকার ক্রমানুসারে সর্বোচ্চ নম্বরধারী প্রার্থী আবদুর রশিদ খানকে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী শীর্ষ প্রার্থীর সাথে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রার্থীর বায়োডাটা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিদ্যুৎ বিভাগের পরামর্শ গ্রহণের জন্য পিজিসিবি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল।

জানা গেছে, এ কে এম গাউছ মহীউদ্দিন আহমেদ ছিলেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি। তিনি এ জন্য তাকেই এমডি নিয়োগ দেয়ার জন্য তদবির করতে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে বড় অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে পিজিসিবির এমডি পদটি বাগিয়ে নিয়েছিলেন গাউছ মহীউদ্দিন। এমডি হয়েই তিনি বিভিন্ন ঠিকাদারদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলেন বিনিয়োগ উত্তোলনের জন্য। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর রাতারাতি বিএনপির সমর্থক সাজার জন্য মাঠে নেমে পরেন। বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের জার্সি বদলে ফেলে তিনি এখন সাচ্চা জাতীয়তাবাদী সাজার চেষ্টা করছেন। 

এ জন্য সাত দিনের ছুটিতে গেছেন। বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করছেন। এ বিষয়ে এ কে এম গাউছ মহীউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য নেয়ার জন্য বারবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। পিজিসিবির প্রকৌশলীদের মতে, একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে পিজিসিবির এমডি পদে এখনো কিভাবে বহাল রয়েছেন তারা ভেবে পাচ্ছেন না। তাকে অতিদ্রুত পিজিসিবির এমডি পদ থেকে সরানো না হলে প্রকৌশলীদের মধ্যে অসন্তোষ আরো বৃদ্ধি পাবে। এতে পিজিসিবিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হহতে পারে।