ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে পুলিশ। রোববার (২৮ জুলাই) সকালে পৌর এলাকার বিজয়পাড়ার বসতঘর থেকে তাদের লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন, সোহাগ মিয়া (৩৩), তার স্ত্রী জান্নাত বেগম (২৫), কন্যা ফাহিমা আক্তার (৪) ও সাদিয়া আক্তার(২)। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পুলিশের ধারণা স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন সোহাগ। তবে পরিবার ও প্রতিবেশীরা সেটি মানতে নারাজ।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নবীনগর পৌর এলাকার বিজয়পাড়ার আমির মিয়ার ছেলে ও নবীনগর নিউ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া স্ত্রী ও দুই কন্যা নিয়ে বিজয় পাড়ার নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। শনিবার সন্ধ্যায় ব্যবসায়িক কাজ শেষে স্ত্রী জান্নাতকে নিয়ে নবীনগরের বাইরে রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে বাসায় ফেরেন।
রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসতঘরে ঘুমিয়ে পড়েন সোহাগ। রোববার সকালে তারা ঘুম থেকে না ওঠায় পরিবারের সদস্যরা তাদের ঘরের দরজায় গিয়ে ডাকাডাকি শুরু করেন। পরে তাদের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে তাদের সবার মরদেহ দেখতে পান। এরমধ্যে সোহাগ ও এক কন্যার লাশ ঘরের তীরের কাঠে ঝুলছিল। স্ত্রী জান্নাত ও অপর কন্যার লাশ খাটে পড়ে ছিল।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশের ধারণা পারিবারিক কলহের জের ধরে বা আর্থিক লেনদেনের কারণে সোহাগ মিয়া তার স্ত্রী ও দুই কন্যাকে হত্যা শেষে আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়রা জানিয়েছেন সোহাগ অত্যন্ত বিশ্বস্ত একটি ছেলে ছিলেন। তিনি একটি মসজিদের কোষাধ্যক্ষও ছিলেন। তার কাছে টাকা-পয়সা জমা থাকতো। এছাড়াও একটি সমিতির মতো করে আর্থিক লেনদেনের দায়িত্ব ছিল তার কাছে৷ আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকের সঙ্গেই লেনদেন ছিল তার। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে তিনি লেনদেন নিয়ে ইদানিং চাপে ছিলেন।
কিন্তু এই কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। পারিবারিক অশান্তির কারণেও আত্মহত্যা করতে পারেন। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্ত শেষে বলা যাবে এটি আত্মহত্যা না কি হত্যা।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিবি) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শচিন চাকমা বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পিবিআইয়ের একটি টিম। যেহেতু লাশ যে ঘরে ছিল তা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল, তাই কেউ হত্যা করে ভিন্ন উপায়ে দরজা-জানালা লাগিয়ে পালিয়ে গিয়েছে কিনা এসব খতিয়ে দেখছেন তারা। কিন্তু তেমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধারণা করা যায় সোহাগ তার স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে আত্মহত্যা করেছেন।
সোহাগের বোন ইয়াছমিন আক্তার বলেন, আমার ভাই ব্যবসা করলে ঋণতো থাকতেই পারে। তার ঋণ ছিল ৪-৫ লাখ টাকা। কিন্তু এই টাকার জন্য এ ধরনের কাজ করতে পারে না।
সোহাগের স্ত্রী জান্নাতের বড় বোন তাসলিমা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ি পাশাপাশি। সোহাগ অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিল। আমার বোনের সঙ্গে কোনোদিন দেখিনি ঝগড়া বা বকাবকি করতে। তার ব্যবসায়িক কারণে লেনদেন করায় অল্প ঋণ ছিল। তা একেবারে কম৷ এছাড়া তার সৎ মা এক লাখ টাকা পেতেন। কিন্তু এই কারণে আত্মহত্যা করবে বলে বিশ্বাস করা যায় না।