বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া কর্মী নেওয়া বন্ধ করেছে। মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ মে’র পর বাংলাদেশসহ ১৫ দেশের শ্রমিক দেশটিতে ঢুকতে পারবেন না।
এ ঘটনায় শুক্রবার শেষ মুহূর্তে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য উপচে পড়া ভিড় ছিল শাহজালাল বিমানবন্দরে। কিন্তু ভিসা পেয়ে, কয়েক লাখ টাকা খরচ করেও মালয়েশিয়া যেতে পারেনি প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি।
তবে ভিসা পেয়েও যারা মালয়েশিয়া আসতে পারছেন না, তাদের দ্রুত নেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান।
শুক্রবার রাতে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর পরিদর্শন করে এ কথা জানান রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান।
এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, যারা ভিসা পেয়ে মালয়েশিয়ায় আসতে পারেনি, তাদের নিয়ে আসার ব্যাপারে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে, যেন তাদের দ্রুত নিয়ে আসা যায়।
তিনি আরো বলেন, পাঁচ লাখ ২৭ হাজারের বেশি ডিমান্ড লেটার সত্যায়ন করেছি। এ পর্যন্ত চার লাখ ৭২ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়াতে এসেছে। আমরা নিয়োগ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, তারা যেন এসে এখানে কাজ পায়।
জানা যায়, বাংলাদেশের অন্যতম আগ্রহের মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ২০০৯ সালে প্রথম দফায় বন্ধ হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের শেষে চালু হয় শ্রমবাজার। পরে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আবার বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। সেই শ্রমবাজার আবার চালু হয় ২০২২ সালে। এখন আবার কর্মী নেওয়া স্থগিত করল দেশটি।
শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়া সরকার নতুন কোটা বরাদ্দ করে বাংলাদেশসহ সব সোর্স কান্ট্রি থেকে আবার কর্মী নেওয়া শুরু করবে ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে।
শাহজালালে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের হাহাকার
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হচ্ছে দেশটির শ্রমবাজার। ১ জুন থেকে আর কোনো বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন না।
এমন অবস্থায় শুক্রবার (৩১ মে) সকাল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকরা। দিনভর কষ্ট করে রাতেও ফ্লাইটের আশায় বিমানবন্দরে মানবেতর অবস্থায় রয়েছেন কয়েকশ যাত্রী। কেউ কেউ টিকিট কেটে এসেছেন, কেউবা আবার টিকিট ছাড়াই সেখানে অপেক্ষা করছেন।
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন চিত্র ।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মালয়েশিয়াগামী সাতটি ফ্লাইট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আরও একটি বিশেষ ফ্লাইট যায়।
বিমানবন্দরে যাত্রীরা বলছেন, কেউ কেউ দুদিন থেকে অপেক্ষা করছেন। কেউবা আবার আজ সকাল থেকে বিমানবন্দরে এসে বসে আছেন।
তাদের ভাষ্য, এজেন্সি থেকে তাদের এয়ারপোর্টে আসতে বলা হয়েছে। তাদের কেউ কেউ টিকিট কেটেছেন, আবার অনেকে টিকিট না থাকা সত্ত্বেও চলে এসেছেন।
তারা জানান, মালয়েশিয়া যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও বিশেষ কোনো ফ্লাইটে যদি তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়, সেই আশায় অপেক্ষা করছেন।
আরিফুল নামে এক যাত্রী বলেন, ‘টিকিট আছে, সকাল থেকে খাওয়া নেই, বিশ্রাম নেই। সর্বশেষ বিশেষ ফ্লাইটেও যেতে পারিনি। আমরা তো বুঝি না কয়টায় ফ্লাইট। আমাকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে তিনবার সময় দিয়েছে। একবার বলে ভোর ৫টায় ফ্লাইট, আবার বলে বিকেল ৪টায়, এভাবে বলে বলে অপেক্ষা করাচ্ছে। আমার সঙ্গে থেকে আমার পরিবারও কষ্ট পাচ্ছে।’
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত হালদার বলেন, ‘অসাধু এজেন্সিগুলো যাত্রীদের ভোগাচ্ছে। তারা টিকিট পায়নি, তবুও বিমানবন্দরে যাত্রীদের এনে হয়রানি করছে। আমরা খবর পেয়েছি, তারা ফ্লাইটের আশায় বসে আছেন। টিকিট কাটতে পারেনি শুধু শুধু যাত্রীদের দুঃস্বপ্ন দেখাচ্ছে। আমাদের নির্দেশনা ছিল নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কেউ যেন টিকিট না কাটে। অনেকে ৬০ হাজার টাকার টিকিট এক লাখ ২০ হাজার দিয়ে কেটেও যেতে পারছে না।’
জানা গেছে, যারা সরকারিভাবে মালয়েশিয়ার কর্মীভিসা পেয়েছেন তাদের এ বছরের ৩১ মের মধ্যে প্রবেশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে দেশটির সরকার। এ বিষয়ে গত ১৬ মে পত্রিকায় জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সবাইকে জানালেও বাংলাদেশে অবস্থানরত অনেক প্রবাসী কর্মী জানতেন না। পরে মে মাসের ২০ তারিখের পর বিষয়টি জানাজানি হলে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার তাড়াহুড়ো পড়ে যাওয়ায় ফ্লাইটের সংকট দেখা দেয়। ফলে অনেক প্রবাসীর মালয়েশিয়া যাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়।