আর্কাইভ | ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ ০৬:১২:৩১ অপরাহ্ন
Photo
এখন বাংলা ডেস্ক
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
২৮ মে ২০২৪
০৪:১৬:২০ পূর্বাহ্ন
আপডেটঃ
৩০ মে ২০২৪
০৫:২৯:০৮ পূর্বাহ্ন

বিদ্যুৎবিহীন বরিশালে পানির তীব্র সংকট


বরিশাল নগরীসহ বিভাগের অধিকাংশ জেলায় টানা ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎবিহীন থাকায় গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে রান্নাবান্না। পানির অভাবে বন্ধ রয়েছে নগরীর বেশির ভাগ হোটেল-রেস্টুরেন্ট। এ জন্য কিনেও খাবার খেতে পারছেন না নগরবাসী।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রোববার (২৬ মে) রাত ১টা থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে গোটা নগরী। একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলার দশ উপজেলায়।


বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী বিল্লাল হোসেন বলেন, রিমালের প্রভাবে বাতাস এবং অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গাছ ভেঙে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। এ ছাড়া বহু খাম্বা উপড়ে পড়েছে। ঘটনার পর থেকেই অর্ধ শতাধিক টিম নগরীতে বিদ্যুৎ সচলের জন্য কাজ করছে। গতরাতে সহজ কাজগুলো শেষ করা হয়েছে, আজ সকাল থেকে কঠিন কাজগুলো শেষ করে বিদ্যুৎ সচল করা হবে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, রিমালের প্রভাবে দেয়াল ধসে দুজন এবং গাছচাপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের বিদ্যুৎ সচল করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আজকের মধ্যে সব এলাকায় বিদ্যুৎ সচল হবে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি, বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করছি।


নগরীর কালুখার বাড়ির বাসিন্দা আলী নেওয়াজ খান রানা জানিয়েছেন, তার বাসায় পানি ঢুকেছে। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছেন। ৩০ ঘণ্টার অধিক সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ভাড়াটিয়াদের পানি দেওয়া সম্ভব হয়নি। পানি কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। তার বাগানের বেশির ভাগ গাছ ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে।


বঙ্গবন্ধু কলোনির বাসিন্দা লাইলী এবং অন্যরা জানান, কীর্তনখোলা নদীর পানি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। আজ সকালে পানি কমা শুরু হলে ঘরে এসে সব অগোছালো অবস্থায় দেখতে পান। ঘর থেকে পানি সেচে বের করে এখন কীভাবে রান্না করবেন তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ কাঠের চুলা ভেঙে গেছে। ঘরে পানি নেই। খাবারের কোনও ব্যবস্থা নেই।


অক্সফোর্ড ভিশন রোডের বাসিন্দা কাজী মিরাজ জানিয়েছেন, সকাল থেকে অন্যান্য এলাকার পানি নেমে গেলেও তাদের এলাকায় এখনও নামেনি। আর বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিদ্যুৎ না থাকায়।

ব্যবসায়ী শাজাহান মিয়া জানিয়েছেন, তার রাইসমিল এবং ময়দার মিলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মিলের মধ্যে পানি ঢুকে গম এবং চাল নষ্ট করেছে।

হোটেল ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া জানান, গতকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় পানি বা পানির ব্যবস্থা করতে পারেননি হোটেলে। এ কারণে গতকাল তার হোটেলে রান্নাবান্না হয়নি। আজও বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করে রান্না করেছেন অনেক কষ্ট করে।

জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। রান্না থেকে শুরু করে টয়লেটে ব্যবহারের জন্যও বোতলজাত পানি কিনতে হচ্ছে তাদের। 

বিদ্যুৎবিহীন ২ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক
 
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকা। কোথাও উপড়ে গেছে বিদ্যুতের খুঁটি, কোথাও গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও নিরাপত্তাজনিত কারণের বন্ধ আছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। সব মিলিয়ে পল্লী বিদ্যুতের ৬৫টি সমিতিতে গ্রাহক সংযোগ বন্ধ আছে। উপকূলীয় এলাকায় ২ কোটি ৭০ লাখ ৭৯ হাজার ৬৩১ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক হিসাবে এই তথ্য দেওয়া হয়।

ঝড়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি সমিতির মোট ২ কোটি ৬৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৫০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা গেছে। এখনও বিদ্যুৎবিহীন আছে ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ গ্রাহক। আরইবির ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পোল নষ্ট হয়েছে ২ হাজার ৩৯২টি, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ৯৮২টি, স্প্যান (তার ছেঁড়া) ৬২ হাজার ৪৫৪টি, ইন্সুলেটর ভেঙেছে ২১ হাজার ৮৪৮টি, মিটার নষ্ট হয়েছে ৪৬ হাজার ৩১৮টি। আরইবির দাবি, সার্বিকভাবে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি ৭৯ কোটি ২ লাখ টাকা।

এদিকে রিমালের প্রভাবে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পোল নষ্ট হয়েছে ২০টি, পোল হেলে পড়েছে ১৩৫টি, বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে ২৪ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার, ১১ কেভি পোল ফিটিংস নষ্ট হয়েছে ১৪২ সেট, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ১২টি, ১১ কেভি ইন্সুলেটর নষ্ট হয়েছে ১৩৪টি। প্রাথমিকভাবে এই কোম্পানির ক্ষতি ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা। বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎবিহীন গ্রাহক সংখ্যা ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১ জন।

এদিকে জ্বালানি বিভাগ থেকে জানায়, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী এলএনজি টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে স্থাপনাগুলোর কোনও ক্ষতি হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কমানো এলএনজি সরবরাহ গতকাল বিকাল থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে বর্তমানে তা ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকেই তা ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে।

মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় চলমান থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ সরেজমিন পরিদর্শন করে নির্ণয় সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তদারকি করা হচ্ছে। জেলা পর্যায় ও সমিতিভিত্তিক কন্ট্রোল রুম রয়েছে। পরিবহন ঠিকাদারকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এলাকায় সব কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য আরইবি ও ওজোপাডিকোর লোকজন প্রয়োজনীয় মালামালসহ প্রস্তুত রয়েছে। ঝড় বা বাতাস কমার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হবে।

আরইবির এক সদস্য জানান, ঝড় শুরুর পর থেকে উপকূলীয় সব এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের বাইরে ছিল প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ গ্রাহক। সকাল থেকে কিছু কিছু জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হচ্ছে। তিনি জানান, আরইবি কর্মীরা মাঠে নেমেছেন। বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি না হলে লাইনগুলো আবার চালু করা হবে। তবে মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্যই তারা বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ করে রেখেছেন বলে জানান তিনি।