চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় দুই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে ১৮ বছর পর আজিজুল হক ওরফে আজিজ (৫০) ও মিণ্টু ওরফে কালু (৫০) নামের দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হতে যাচ্ছে। আজ সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে এই দুই আসামিকে ফাঁসির কাঠগড়ায় ওঠানো হবে। ইতোমধ্যে যশোর কারা কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে।
গত শনিবার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই আসামির সাথে শেষবারের মতো দেখা করেছে তাদের পরিবারের সদস্যরা। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন- আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের বদর ঘটকের ছেলে আজিজ ওরফে আজিজুল ও একই এলাকার আলীহিমের ছেলে মিণ্টু ওরফে কালু।
চুয়াডাঙ্গা আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গা থানার জোড়গাছা হাজিরপাড়া গ্রামের কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমকে রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তাদের দু’জনকে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ওই দুই নারীর গলাকাটা হয়।
এ ঘটনার পর দিন ২৮ সেপ্টেম্বর নিহত কমেলা খাতুনের মেয়ে নারগিস আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আজিজুল হক ওরফে আজিজ ও মিণ্টু ওরফে কালুসহ মোট চারজনকে আসামি করা হয়। অপর দুজন হলেন একই গ্রামের সুজন ও মহি। মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আসামী মহি। এরপর ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সুজন, আজিজ ও মিন্টুকে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। পরে আসামিপক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট তা বহাল রাখেন।
এছাড়া ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশও দেন হাইকোর্ট। পরে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখেন এবং অপর আসামি সুজনকে খালাস প্রদান করেন। খালাস পাবার পর চলতি মাসের ২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান সুজন।
এদিকে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান। কিন্তু তা নামঞ্জুর হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে কারা অধিদফতরকে চিঠি দেয়। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ৮ সেপ্টেম্বর সেই চিঠি গ্রহণ করে।
অন্যদিকে, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্রে জানা যায়, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করতে ইতোমধ্যেই ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। একইসাথে প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জল্লাদ মশিয়ার রহমান, কেতু, কামালসহ বেশ কয়েকজনের।
এবিষয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন খান রোববার বলেন, ‘দুই আসামির ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য আদেশ এসেছে। দুই আসামির পরিবারের পক্ষ থেকে শেষ দেখা করে গেছেন অর্ধশতাধিক লোক। আগামীকাল (আজ) সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে আজিজুল ও মিণ্টুর ফাঁসি কার্যকর করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। রায় কার্যকরের সময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।’