আর্কাইভ | ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ জিলহজ্ব ১৪৪৬ ০৫:২০:৪৪ পূর্বাহ্ন
Photo
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
১৩ জুন ২০২৫
০৮:৩৪:৩৩ পূর্বাহ্ন
আপডেটঃ
১৩ জুন ২০২৫
০৮:৩৫:২৯ পূর্বাহ্ন

এবার ইরানকে যে হুমকি দিল ট্রাম্প-নেতানিয়াহু 


পরমাণু প্রকল্প নিয়ে ইরানকে ‘অবশ্যই’ সমঝোতায় আসতে হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদি এ ইস্যুতে ইরান দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে— তাহলে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা এবং আরও ধ্বংস ও মৃত্যু দেশটিকে দেখতে হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।


শুক্রবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, “ইতোমধ্যে (ইরানে) অনেক মৃত্যু ও ধ্বংস হয়েছে, পরবর্তী হামলাগুলো আরও নিষ্ঠুর হবে এবং সব কিছু শেষ করে দেবে; কিন্তু এখনও এই ধ্বংস থামানোর সুযোগ আছে।”

“ইরানকে অবশ্যই সমঝোতায় আসতে হবে এবং সেটি হতে হবে সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই…তাই যতদ্রুত সম্ভব সমঝোতায় আসুন। আর কোনো ধ্বংস নয়, কোনো মৃত্যু নয়। ঈশ্বর আপনাদের সবাইকে আশীর্বাদ করুন।”


এর আগে বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরান কখনও পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে পারবে না। পাশাপাশি, দেশটি ফের কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরে আসবে বলে আশাও প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প।

শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের আট শহরে বড় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরানের পরমাণু প্রকল্প ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ১০০ স্থাপনায় হামলা করা হয়েছে।


হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, সশস্ত্র বাহিনীর অভিযাত শাখা দ্য রেভোল্যুশনারী গার্ড কোরের প্রধান কমান্ডার হোসাইন সালামি, পরমাণু বিজ্ঞানী ও ইরানের পরমাণু সংস্থার প্রধান ফেরেয়দুন আব্বাসি এবং পরমাণু বিজ্ঞানী মোহাম্মদ তেহরানচি নিহত হয়েছেন।

তেল আবিব বলছে, তেহরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে একটি দীর্ঘমেয়াদী অভিযানের শুরু হিসেবে এই হামলা চালিয়েছে তাদের সামরিক বাহিনী।

ইরানি সংবাদমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে রয়টার্স লিখেছে, দেশটির প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটেছে। একইসঙ্গে সম্ভাব্য পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইসরায়েল।

হামলা শুরুর কিছুক্ষণ পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “আমরা ইসরায়েলের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি।”

“কিছুক্ষণ আগে শুরু হয়েছে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ । আমাদের এই সামরিক অভিযানের লক্ষ্য ইরানি হুমকি প্রতিরোধ করা। যতদিন না এই হুমকি বন্ধ হচ্ছে, ততদিন এ অভিযান চলবে।”

সূত্র : এএফপি, জিও নিউজ

যতদিন প্রয়োজন, ততদিন আক্রমণ অব্যাহত রাখবে ইসরায়েল : নেতানিয়াহু

ইরানের রাজধানী তেহরান এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। রাতভর চালানো এই হামলায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি ও রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামিসহ আরও অনেকেই নিহত হয়েছেন।


তবে এই হামলা এখানেই শেষ নয়। যতদিন প্রয়োজন হবে, ততদিন ইসরায়েল আক্রমণ অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। শুক্রবার (১৩ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, “এই হামলা ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে।”


বিবিসি বলছে, রাজধানী তেহরান থেকে ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর নাতাঞ্জে হামলা চালানোর কথা জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। এটিকে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মূল এলাকা হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “ইরানি বোমা বানানোর সঙ্গে জড়িত” বিজ্ঞানীরা তাদের নিশানায় রয়েছেন। নেতানিয়াহুর ভাষায়, “যতদিন প্রয়োজন, ততদিন এ আক্রমণ অব্যাহত থাকবে।”


এদিকে ইরানে হামলার পরপরই নিজ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইসরায়েলি সরকার। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “খুব শিগগিরই ইসরায়েলের ওপর পাল্টা হামলা” চালাতে পারে ইরান।

এছাড়া ইরানের ওপর যখন হামলা চালানো হয় ইসরায়েলের মানুষ তখন ঘুমাচ্ছিলেন। জেরুজালেমে অবস্থানরত একজন বিবিসি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সাইরেনের বিকট শব্দে এবং মোবাইলে জরুরি সতর্কবার্তা পেয়ে তারা জেগে ওঠেন।

অন্যদিকে সিএনএন বলছে, শুক্রবার ভোরে ইরানে হামলা চালানোর পর সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক আক্রমণের আশঙ্কায় ইসরায়েল সরকার নাগরিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।


ইসরায়েলের হোম ফ্রন্ট কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল রাফি মিলো বলেন, “এই অভিযান চলাকালে আমরা দেশে ব্যাপক সতর্কতা সংকেত বা সাইরেন বাজতে দেখতে পারি। তাই প্রত্যেক নাগরিককে অনুরোধ করছি— নিজ নিজ অবস্থান থেকে দ্রুত ও যথাসম্ভব সুরক্ষিতভাবে আশ্রয় নিতে।”

তিনি আরও বলেন, “আপনার বাসাবাড়িতে বা যে স্থানে আছেন, সেখানে যদি সুরক্ষিত কক্ষ, বাংকার বা হোম ফ্রন্ট কমান্ড অনুমোদিত নিরাপদ স্থান থাকে, তাহলে সেগুলোতে আশ্রয় নিন। তা না হলে অন্তত ভবনের সিঁড়িঘরে বা ভেতরের কোনও কক্ষে অবস্থান করুন।”

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও সরকার আগেই মনে করছিল, ইরানের পাল্টা হামলা যে কোনও সময় শুরু হতে পারে। তাই নাগরিকদের জন্য আগে-ভাগেই এই নির্দেশনা জারি করা হয়।