আর্কাইভ | ঢাকা, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ শা‍ওয়াল ১৪৪৬ ০৩:৪০:৪১ অপরাহ্ন
Photo
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
২৫ এপ্রিল ২০২৫
০৮:৪৮:১৯ পূর্বাহ্ন

এই জেনারেশন যে কাউকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারে


আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুললে সরকার পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ‘দোহাই’ দেয় বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। আজ শুক্রবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে এ কথা বলেছেন তিনি। ‘জুলাই, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে’ এই সমাবেশের আয়োজন করে ইনকিলাব মঞ্চ।

বৃহস্পতিবার শাহবাগে এই উন্মুক্ত প্রান্তরে তাঁরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেটা ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে পূরণ হওয়ার কথা ছিল বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন সারজিস আলম। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই তাদের কাছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তারা আমাদের পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির দোহাই দেয়।’ এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যখন শাপলা চত্বর, পিলখানা এবং জুলাইয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় ছিল?’

তবে সারজিস আলম তাঁর বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নিয়ে এই অবস্থান ব্যক্তকারী হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা উপদেষ্টা কিংবা পশ্চিমা কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।


এ সময় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে সারজিস বলেছেন, ‘এই জেনারেশনকে (প্রজন্ম) ভয় করুন। যদি এই জেনারেশনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আবেগ নিয়ে খেলা করেন, তাহলে এই জেনারেশন সকল ক্ষমতার বিপক্ষে গিয়ে যে কাউকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারে।’

এই সমাবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সহসমন্বয়ক মোসাদ্দেক ইবনে আলী বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে, তারা বিদেশি দূতাবাসগুলোর কাছে নিজেদের শির দাঁড়া বিক্রি করে দিয়েছে। দল গঠনের পর তারা দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়, কিন্তু কোথাও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা ছিল না। এই সরকারের ঘুড়িটা অন্তর্বর্তীকালের মধ্যে ঘুরলেও তার নাটাইটা বিদেশি কোনো দূতাবাসের হাতে রয়েছে।

সরকার কোন কোন বিচার করছে এবং সেটা কতখানি হয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলার দাবি জানান এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক ফ্যাসিবাদী দলকে চিরস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের নজির আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সেই নিয়মেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।


সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে পা হারানো রিফাত হাওলাদার বলেন, ‘আজ আমি একটি পা নিয়ে বলতে চাই, আমার মতো আর কোনো ভাইয়ের পা না হারাক। যত দিন বেঁচে থাকব, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’

জুলাইয়ে সহিংসতায় চোখ ও পায়ে আঘাত পাওয়া ইমদাদুল বলেন, ‘আমি যখন দেখতে পাই, আওয়ামী লীগ নামক হায়েনারা রাস্তায় মিছিল করে, তখন আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবে, বাংলাদেশে তাদেরও বিচার নিশ্চিত করা হবে।’

১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে শহীদ হওয়া সায়েমের মা বলেন, ‘একজন মা জানে, সন্তান হারানোর বেদনা কী। আমার ছেলেকে পাখির মতো গুলি করে মেরেছিল। আজ ৯ মাস পরেও ছেলে হত্যার বিচার কেন হয়নি? আমার একটাই দাবি, শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটিতে এনে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক। বাংলার মাটিতে চিরদিনের জন্য আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে ছেলেকে হারানোর বেদনা কিছুটা মলিন হবে।’

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ মেজর তানভীরের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীকে আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কখনো শুনেছি তাঁকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, কোথাও শুনেছি তাঁকে গুম করে নিয়েছে। কিন্তু আজও আমার স্বামীর সন্ধান পাইনি। তাঁর কবরের সন্ধানটুকু পাইনি। ১৬ বছর ধরে আমরা নিপীড়িত আওয়ামী লীগের কারণে।’