আর্কাইভ | ঢাকা, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১২ শা‍ওয়াল ১৪৪৬ ১০:০১:০২ পূর্বাহ্ন
Photo
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
১৩ মার্চ ২০২৫
০৮:০৬:০৫ পূর্বাহ্ন
আপডেটঃ
১৪ মার্চ ২০২৫
০৯:৪৫:৩৪ পূর্বাহ্ন

শিশু আছিয়ার জানাজায় মানুষের ঢল, বিচার শুরু ৭ দিনের মধ্যে 


ধর্ষণ ও নির্যাতনে গুরুতর আহত আট বছরের শিশু আছিয়ার মরদেহ মাগুরায় পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার মরদেহ নিয়ে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার মাগুরা স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। 


এর আগে দুপুরে আছিয়া ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যায় বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। সন্ধ্যার আগে তার মরদেহ সিএমএইচ থেকে মাগুরার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সেনাবাহিনী। 

মাগুরায় মরদেহ পৌঁছানোর পর অ্যাম্বুলেন্সে আছিয়ার মরদেহ শহরের নোমানী ময়দানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় মানুষের ঢল নামে। বাদ এশা আছিয়ার বাড়ি শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম  সোনাইকুন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সোনাকুন্ডী সম্মিলিত ঈদগা ও গোরস্থান ময়দানে তাকে দাফন করা হবে।


এদিকে শিশু আছিয়ার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কাঁদছেন শিশুটির স্বজন ও প্রতিবেশীরা। দুপুরে আছিয়ার মৃত্যুর খবর তার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন আতীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ এলাকাবাসী।

মাগুরার বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসে আছিয়াদের বাড়িতে। পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম। শিশু, কিশোর-কিশোর, নারী-পুরুষসহ নানা বয়সী মানুষের একটাই দাবি- ধর্ষকের ফাঁসি চাই, ফাঁসি। এ ঘটনার শাস্তি দাবি করেন তারা। 


আছিয়ার খালা ধোলায় বেগম রোকেয়া আহাজারি করে বলেন, আমাদের মনি আছিয়া আর নেই। আমরা মনিরে আর জীবিত দেখতে পারবো না। আমরা সঠিক বিচার চাই।

আছিয়ার সহপাঠী রিদ্ধিতা বিশ্বাস বলে, আমি আর আছিয়া একসাথে স্কুলে যেতাম। আছিয়ার যে মেরেছে তার সঠিক বিচার চাই।

শিশুটির ছোট চাচা ইব্রাহিম শেখ বলেন, আছিয়ার মৃত্যুর খবরে আমাদের গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মাগুরার বিভিন্ন স্থানের মানুষ আমাদের বাড়িতে ছুটে আসছে। ঢাকা থেকে তার মৃত্যুর খবর শোনামাত্র এসে আমার আত্মীয়-স্বজন,পাড়া প্রতিবেশীদের মাঝে জানাই। মেয়েটির বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। সে ভালোভাবে কথাবার্তা বলতে পারে না। আমি সব সময় আছিয়ার পরিবারের সাথেই থাকবো। এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের সর্ব্বোচ শাস্তি দাবি করে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন । 

 নোমানী ময়দানে সেই শিশুর জানাজা অনুষ্ঠিত

মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের সেই শিশুটি মারা গেছে। আজ তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় মাগুরার নোমানী ময়দানে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় ঢাকা থেকে গিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানাজায় অংশ নেন।


এ ছাড়া এলাকার অসংখ্য মানুষ জানাজায় শরীক হন। 

এর আগে, আজ দুপুর ১টার দিকে শিশুটি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যায় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। 

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ ১৩ মার্চ দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে।


সিএমএইচের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল, দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃদস্পন্দন ফিরে আসেনি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং যে কোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় প্রথমে তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। 

এরপর রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে হাসপাতালের পিআইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট নেওয়া হয়।

তারপর গত ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সেখানে হাসপাতালের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডে ছিলেন সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া, শিশু হৃদরোগ বিভাগ, শিশু বিভাগের সার্জন, ইউরোলজি বিভাগ ও থোরাসিক সার্জন বিভাগের চিকিৎসকেরা।

এদিকে, শনিবার (৮ মার্চ) ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। এতে ভুক্তভোগীর বড় বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর রোববার (৯ মার্চ) মধ্যরাতে আদালতে আসামিদের রিমান্ড আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে মূল অভিযুক্ত ভুক্তভোগী শিশুর বোনের শ্বশুরকে ৭ দিন, স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুর প্রত্যেকের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। মাগুরার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মতিন এ আদেশ দেন।

চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার আসামির মধ্যে তিনজন পুরুষের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ইতোমধ্যে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে তিন আসামিকে মাগুরা থেকে ঢাকায় সিআইডির ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবে আনা হয়। একইসঙ্গে শিশুটির ডিএনএ নমুনাও জমা দেওয়া হয়।


ধর্ষণের বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

মাগুরায় ৮ বছর বয়সী শিশুর ধর্ষণের ঘটনায় বিচার কাজ ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।


বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশ্বাস দেন তিনি। 

আইন উপদেষ্টা বলেন, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির ময়নাতদন্ত আজকেই সম্পন্ন হবে। এরইমধ্যে ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী ৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এ ঘটনায় ১২ থেকে ১৩ জন ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।


তিনি আরও বলেন, ধর্ষণ ও বলাৎকারের মামলাগুলো দ্রুত বিচার করতে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করা হবে। আগামী রোববারের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনীর অধ্যাদেশ জারির চেষ্টা করা হবে। 

এসময় দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ার করেন আসিফ নজরুল।

প্রসঙ্গত, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশুটি আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।


এ ব্যাপারে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আইএসপিআর জানায়, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি ১৩ মার্চ দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
 
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, দুইবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।

আট বছরের শিশুটি গত বুধবার (৫ মার্চ) বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গভীর রাতে ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।

পরে শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা ছয়টায় শিশুটিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় ভর্তি করা হয়। শিশুটির চিকিৎসায় সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। বোর্ডে ছিলেন- সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া, শিশু হৃদ্‌রোগ বিভাগ, শিশু বিভাগের সার্জন, ইউরোলজি বিভাগ, থোরাসিক সার্জন বিভাগের চিকিৎসকেরা।