আর্কাইভ | ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২, ২০ শা‍ওয়াল ১৪৪৬ ০৯:০৩:০২ পূর্বাহ্ন
Photo
এখন বাংলা ডেস্ক
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
১১:০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন
আপডেটঃ
১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
১১:১২:১২ পূর্বাহ্ন

ছাপা হয়নি এখনো ১৪ কোটি বই  


চলতি বছর স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা কার্যক্রমে বিপর্যয় ঘটেছে। শিক্ষাবর্ষের প্রায় দেড় মাস হতে চললেও এখনো সবার হাতে বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী প্রথম থেকে দশম শ্রেণির ৪০ কোটি নতুন বইয়ের মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ২৬ কোটি বই ছাপা হয়েছে।

এর মধ্যে ২২ কোটি বই স্কুলগুলোতে পৌঁছে গেছে। ছাপা হওয়া চার কোটি বই বাইন্ডিং সমস্যায় পড়ে আছে। ছাপা বাকি রয়েছে ১৪ কোটি বই। চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে এসব বই ছাপা শেষ হবে বলে এনসিটিবির আশা থাকলেও প্রেস মালিকদের দাবি, ছাপা পুরোপুরি শেষ হতে পারে মার্চে।

এদিকে সময়মতো বই ছাপা না হওয়ার পেছনে এনসিটিবি ও প্রেস মালিকরা একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বই ছাপা কাজে দেরি হওয়ার পেছনে প্রেসগুলোকে সক্ষমতার চেয়ে বেশি কাজ দেওয়া, কম সময়, বেশ কিছু বই ব্যাপক পরিমার্জন এবং সর্বোপরি এনসিটিবির অদক্ষতা ও ব্যর্থতা দায়ী। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মহলের অর্থবাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্রেসগুলো বাস্তবতার চেয়ে ৭০ ভাগ বেশি সক্ষমতা দেখিয়ে বই ছাপার কাজ নিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. একেএম রিয়াজুল হাসান আমার দেশকে বলেন, এবার ১১৬টি প্রেসকে ৪০ কোটি বই ছাপার জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়। এসব প্রেসে প্রতিদিন এক কোটি ৪২ লাখ বই ছাপার সক্ষমতা রয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়। তবে বাস্তবে তারা দিনে মাত্র ৪০ লাখ বই ছাপছে (বাস্তব সক্ষমতা ৭০ ভাগ কম)। প্রেসগুলোতে দক্ষ বাইন্ডার সমস্যাসহ নানা সমস্যা রয়েছে। যে কারণে তারা যথাসময়ে বই ছাপাতে পারছে না।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান জানান, এ পর্যন্ত ৪০ কোটি বইয়ের মধ্যে ২৬ কোটি বই ছাপা হয়েছে। তবে বাইন্ডার সংকটের কারণে ৪ কোটি বই তারা দিতে পারছে না। অর্থাৎ ১৪ কোটি বই এখনো ছাপা বাকি। এর মধ্যে শারীরিক শিক্ষাসহ কিছু বই (তিন কোটি) বছরের শেষে লাগে। সেগুলো বাদে বাইন্ডিংয়ের অপেক্ষায় থাকা চার কোটিসহ মোট ১৫ কোটি বই এ মাসের ২০ তারিখের মধ্যে ছাপা হবে বলে আশা করছি।

এদিকে সময়মতো বই না পাওয়ায় স্কুলগুলোতে এখনো পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়নি। এতে সিলেবাস অনুযায়ী স্কুলের ক্লাস ঘাটতিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। বিনামূল্যের এই বই ছাপা কাজে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পেছনে এনসিটিবির ব্যর্থতাকেই সবচেয়ে বেশি দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট প্রেসের সক্ষমতা যাচাই না করেই ছাপার কাজ দেওয়া হয়েছে। যাদের সক্ষমতা আছে তারা যেমন কাজ পেয়েছে, অন্যদিকে সক্ষমতা কম থাকলেও বেশি কাজ পেয়েছে অনেকে। এতে যথাসময়ে বই ছাপতে পারছে না তারা। প্রেসগুলোকে দ্রুত বই ছাপার জন্য মৌখিকভাবে চাপ দিলেও চুক্তি অনুযায়ী অনেক সময় হাতে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারছে না এনসিটিবি।

তা ছাড়া বই পরিমার্জনেও বেশি সময় লাগিয়েছে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ। এমনকি অনেক বই পরিমার্জনের পরও ছাপার অনুমোদন দিতে দেরি করা হয়েছে। বই ছাপার এই বিলম্বের পেছনে সরকারকে বিপাকে ফেলতে এনসিটিবির একটি মহলের ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি ব্যাপক অর্থ বাণিজ্যের বিষয় জড়িত থাকতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এনসিটিবির বই ছাপা কাজ পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞরা জানান, এ বছর প্রথম থেকে দশম শ্রেণির ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করেছে এনসিটিবি। বই পরিমার্জন করে ছাপা কাজের অনুমোদন দিতে দেরি হওয়ায় মূলত যথাসময়ে বই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। বাস্তবতা হলো প্রতি বছরের গতানুগতিক নিয়মানুযায়ী সব বই পরিমার্জন করা হলেও এক্ষেত্রে মাধ্যমিকের ইতিহাস, বাংলা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়সহ অল্প কয়েকটি বইয়ের গল্প, ইতিহাস বা বিভিন্ন তথ্য বেশি সংশোধন করা হয়েছে।

বাকি প্রাথমিকের বই, মাধ্যমিকের বিজ্ঞান, গণিতসহ অন্যান্য বই তেমন কোনো সংশোধন হয়নি। তা ছাড়া নবম-দশম শ্রেণির বই সবার আগে পরিমার্জন করা হলেও তা ছাপা শুরু হয়েছে সবার শেষে। অর্থাৎ বই পরিমার্জন শেষে ছাপার অর্ডার দিতে অনেক দেরি করা হয়েছে। এগুলো আগেই ছাপা শুরু হলে এত দেরি হতো না। এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও দক্ষতার অভাবের কারণে এই অবস্থা হয়েছে।

তবে এসব অভিযোগ নাকচ করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান জানান, আগস্ট-পরবর্তী বই পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং বই পরিমার্জনে তারা খুব কম সময় পেয়েছেন। আর ছাপার কাজ আগে পরে দিলে লট বিভাজনে জটিলতা সৃষ্টি হতো। তবে প্রেসগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে পারলে আগেই ছাপা শেষ হতো। চুক্তি অনুযায়ী প্রেসগুলো ৪০ দিন সময় পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২৫ দিনে ৫০ ভাগ কাজ তারা শেষ করেছে। তবে বাকি কাজ ১৫ দিনে শেষ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

এরপরও নানা ফাঁকফোকরের কারণে শর্ত ভঙ্গ বা অনিয়মে জড়িত প্রেসগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুদ্রণ শিল্প সমিতির একজন নেতা আমার দেশকে জানান, সব বই ছাপতে প্রকৃতপক্ষে সময় লাগে ছয় থেকে সাত মাস। এবার তিন মাসও শেষ হয়নি। দিনে এক কোটি ৪২ লাখ বই ছাপার সক্ষমতার কথা এনসিটিবি কোথায় পেয়েছে তা তাদের জানা নেই। 

তথ্যসূত্র: আমার দেশ।