জীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলার পর এবং অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে এ পর্যন্ত ৭৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিবি) আমির হোসেন এবং গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার চৌধুরী জাবের সাদেক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আটকদের মধ্যে ৩৫ জন গাজীপুর মহানগরের। এর মধ্যে ১৬ জনকে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযান শুরুর আগেই আটক করা হয়েছিল। এছাড়া গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাইরে কালিয়াকৈর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, কালিগঞ্জ ও জয়দেবপুর থানা এলাকা থেকে ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের গ্রামের বাড়ি ধীরাশ্রম এলাকা পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ বাড়িতে এখন তালা ঝুলছে। কোনো কোনো এলাকায় দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। গত রাতে ধীরাশ্রম এলাকায় অভিযান চালিয়েছে যৌথবাহিনী।
এর আগে গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে গাজীপুর মেট্রো সদর ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলায় আহত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা জানান, আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে লুটপাট করা হচ্ছে এমন সংবাদ তাদেরকে জানানো হয়। খবর পেয়ে তারা সেখানে যান। তাদেরকে ফাঁদে ফেলে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এ ঘটনার পরদিন শনিবার গাজীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। হামলায় জড়িত ১৬ জনকে আটক করা হয়।
তবে গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় আ ক ম মোজাম্মেল, রাসেল, জাহাঙ্গীরসহ সকলকে গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষার্থীরা। সেই ঘটনার পরপরই সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ঘোষণা করে সরকার
এলাকায় আতঙ্ক, ঘরে ঘরে ঝুলছে তালা
গাজীপুর নগরের আক্কাস মার্কেট থেকে টঙ্গী-জয়দেবপুর সড়ক ধরে কিছুদূর সামনে এগোলে হাতের ডানে দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ি। গাছপালায় ঢাকা বাড়িটির মূল ফটকে ঝুলছে দুটি তালা। বাড়ির সামনেই পড়ে আছে ভাঙা কাচ, কাঠ ও সিরামিকের ছোট ছোট টুকরা। বাড়ির আশপাশে স্থানীয় বাসিন্দাদের ৪০ থেকে ৫০টি বাড়ি। প্রায় প্রতিটি বাড়িই ফাঁকা। ফটকে ঝুলছে একাধিক তালা। সদাব্যস্ত সড়কটিতে নেই মানুষ বা যানবাহনের চলাচল। এ চিত্র গতকাল শনিবার বিকেল পাঁচটার।
গত শুক্রবার রাতে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো দাক্ষিণখান এলাকায়। পুলিশি হয়রানি বা গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়েছেন এলাকার অনেক বাসিন্দা। এর ফলে এলাকাটির বেশির ভাগ বাড়িতেই ঝুলছে তালা। রাস্তাঘাটেও নেই তেমন লোকজন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ঘটনার রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। গতকাল ভোর থেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান অনেকে।
মোজাম্মেল হকের বাড়ির পশ্চিম পাশে স্থানীয় আবুল বাছেতের বাড়ি। টিনশেড বাড়িটির মূল ফটক বন্ধ। বেশ কয়েকবার ফটকে নাড়া দেওয়ার পর বেরিয়ে আসেন বাছেতের স্ত্রী ষাটোর্ধ্ব কুলসুম বেগম। তিনি বলেন, ‘গতকাল এশার নামাজের পর হঠাৎ হুনি (শুনি) ভাঙচুরের শব্দ। মসজিদের মাইকে হুজুর মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়ছে বইল্যা ঘোষণা দেয়। এরপর হুড়মুড় কইর্যা মানুষ গিয়ে হামলা চালায়। পরে হুনি ছাত্ররা আহত হইসে। হেরপর থেইক্যা ডরে সবাই এলাকা ছাইড়্যা দিছে। আমরাও গেট বন্ধ রাখতাছি।’
কথা হলে মসজিদসংলগ্ন একটি বাড়ির নারী বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার রাতেই মসজিদটিতে তালা দেওয়া হয়। এর পর থেকে সেটি তালাবদ্ধ। হয়রানির ভয়ে কেউ নামাজ পড়তেও যাচ্ছেন না।
আফিয়া বেগম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘প্রত্যেক দিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সড়কে মানুষ হাঁটা-চলা করে। পোলাপান খেলাধুলা করে। কিন্তু আইজক্যা কেউ নাই। দেইখ্যা মনে সব শ্মশান হইয়্যা গেছে।’