গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ কেন
আর্কাইভ | ঢাকা, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ শাবান ১৪৪৬ ১২:০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
Photo
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
০১:৩৭:৩৬ পূর্বাহ্ন

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ কেন


গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বহুমুখী হুমকি দেখা দিয়েছে যা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে দেশে বিদেশে। সংবাদপত্র অফিসে হামলা, শত শত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা এবং সরকার কর্তৃক তিন দফায় সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চায় কোনো বাধা দেবে না এবং ঢালাও মামলা সমর্থন করে না তারা। তবে নানাভাবে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকরা আক্রান্ত হওয়ায় গণমাধ্যম মালিকদের সংগঠন, সম্পাদক পরিষদ এবং গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন উৎকণ্ঠা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বিবিসিকে বলেন, “গত সরকারের সময় আমরা দেখেছি যে ঐ সরকারের বিরুদ্ধে ঠিকভাবে কথাই বলা যেতো না। তারা কোনো সমালোচনা সহ্য করতো না। এখন টেলিভিশনগুলো দেখেন এই অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা যারা পরের সরকার আসবে বলে তারা মনে করছে বিএনপি কিংবা জামায়াত, তাদের প্রচার প্রপাগান্ডা হচ্ছে এটাও সাংবাদিকতা হচ্ছে না।”

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
৫ই আগস্ট সরকার পতনের দিন মিরপুরে গুলিতে নিহত মো. ফজলুর হত্যামামলায় অজ্ঞাত দেড় থেকে দুশ এবং ১৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। ভাসানটেক থানার ওই হত্যা মামলায় আসামিদের মধ্যে ২৫ জনই সাংবাদিক।


ওই মামলাটি হয় ঢাকার কাফরুল থানায়। এজাহারে উল্লেখ রয়েছে মো. ফজলু বিজয়োল্লাস করার সময় আসামিগণ লোহার রড, চাপাতি দিয়ে আঘাত করে এবং গুলি করে হত্যা করে। ভাসানটেক থানাধীন মিরপুর ১৪ নম্বর মোড়ে দিগন্ত ফিলিং স্টেশনের সামনে সন্ধ্যা সাতটার হামলার ঘটনা ঘটে।


দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কর্মরত শাহনাজ শারমীন ওই হত্যা মামলার একজন আসামি। মামলার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন পাঁচই অগাস্ট সারাদিন তিনি লাইভ সম্প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এসেছে ওই সময় তিনি বঙ্গভবনের সামনে থেকে লাইভ রিপোর্টিং করেছেন।

“সময়টা খুব অদ্ভুত এবং আমাকে বিস্মিত করেছে কারণ ওই সময় আসলে বঙ্গভবনে আমি উপস্থিত ছিলাম। বঙ্গভবনের সামনে আমরা সব টেলিভিশন উপস্থিত ছিলাম। সেখান থেকে আমি লাইভ দিচ্ছিলাম। আমি রাত এগারোটার পরে ওখান থেকে ব্যাক করি অফিসে।”

বিষয়টি নানাভাবে শঙ্কার কারণ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মিজ শারমীন।

“মামলায় নাম ঝুলে আছে, আমি হয়রানি হবো না, এটা আমি কীসের ভিত্তিতে আমি এই আশঙ্কা থেকে মুক্ত হবো। সেই জায়গায় আমার প্রতিদিনই শঙ্কা, আশঙ্কা বা প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। এটি আমাকে শঙ্কিত করে। এটি কি আমার কাজের গতিকে থামিয়ে দিচ্ছে না।”

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সংবাদপত্র, টিভি, অনলাইন নির্বিশেষে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় দেড়শ সাংবাদিক হত্যা মামলায় আসামি হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন অনেকে। হত্যামামলায় অন্তত পাঁচ জন সাংবাদিক কারাগারে আছেন।

সাংবাদিকদেরকে ঢালাও হত্যা মামলায় আসামি করা উদ্বেগজনক মনে করে সম্পাদক পরিষদ। পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বিবিসিকে বলেন, “এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার সম্পূর্ণভাবে পরিপন্থী। এখন বাংলাদেশ মনে হয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থানে আছি, যেখানে সাংবাদিকরা খুনের আসামি। একশ চল্লিশ জনের কাছাকাছি খুনের আসামি হওয়া- এটা কি সম্ভব? এটা কি দেশের মানসম্মান উজ্জ্বল করছে? এটা দেশের ভাবমূর্তী উজ্জল করছে কীভাবে? তাহলে আমরা সাংবাদিকরা খুনের আসামি হয়ে গেলাম। আমি মনে করি যে এটা অত্যন্ত ভুল পদক্ষেপ। আমার ধারণা এটা প্রফেসর ইউনূস সরকারের পলিসিগত না।”

অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল
অন্তর্বর্তী সরকার তিন দফায় সাংবাদিকদের স্থায়ী অস্থায়ী অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে। তথ্য অধিদপ্তরের কার্ড বাতিলের তালিকায় নাম আছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপি’র ঢাকা ব্যুরো চিফ জুলহাস আলমের। এছাড়া বাতিলের তালিকায় নাম রয়েছে পেশাদার অনেক সাংবাদিকের নাম।

বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক তাইমুর রশীদের কার্ডটিও বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি বিস্মিত, অবাক এবং বিব্রত।

তাইমুর রশীদ জানান ২০২২ সালে সেপ্টেম্বরের পর থেকে তার কার্ডটি আর নবায়ন করা হয়নি। তিনি দুই পন্থী কোনো সাংবাদিক ইউনিয়নেরও মেম্বার নন বলে দাবি করেন।

“এখানে যাচাই বাছাইটা আরো সতর্ক এবং পরিশীলিত এবং আরো বেশি সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিৎ ছিল। আপনি আমার নাম টানছেন, কেন নাম আনছেন, কারণটা কী? আমি কি অবৈধ কাজে জড়িত ছিলাম কি না। যেইটা আমরা বার বার বলছি যে ফ্যাসিস্ট সরকারকে কী সুবিধা আমি দিয়েছি বা কী সুবিধা আমি নিয়েছি। যখন হঠাৎকরে এ ধরনের একটি তালিকায় নাম আসে তখনতো এটা অবশ্যই বিব্রতকর।”