গন্ধ এমন এক অনুভূতি, যা ফেলে আসা দিনের সঙ্গে মিশে থাকে
আর্কাইভ | ঢাকা, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ৯ রমজান ১৪৪৬ ০৪:৪৬:৪৩ অপরাহ্ন
Photo
এখন বাংলা ডেস্ক
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
০১:০৮:৪১ পূর্বাহ্ন

গন্ধ এমন এক অনুভূতি, যা ফেলে আসা দিনের সঙ্গে মিশে থাকে


গন্ধ এমন এক অনুভূতি, যা আমাদের ছোটবেলার স্মৃতি, হারিয়ে যাওয়া দিন, পুরোনো প্রেম, আর ফেলে আসা জীবনের নানা মুহূর্তের সঙ্গে মিশে থাকে। কোনো চেনা গন্ধ যখন নাকের কাছে আসে, অতীতের সুখস্মৃতি যেন এক লহমায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। দাদী-নানীদের নকশা তোলা কাঁথার চেনা গন্ধ, বৃষ্টির সোঁদা মাটি, কিংবা মায়ের চুলের তেলের গন্ধ—এগুলো আমাদের স্মৃতির অমূল্য অংশ। সত্যি করে বলুন তো, বাড়ি ছেড়ে দূরে কোথাও বসে কারও চুল থেকে সে পরিচিত তেলের গন্ধ এলে মায়ের কথা মনে পড়েনি এমন কখনো হয়েছে?

সেই ছোট্টবেলার জন্মদিনে প্রিয় বন্ধুর থেকে উপহার পাওয়া পারফিউমের শিশিতে বোতলবন্দি হয় মুহূর্তরা। জীবনে যতবারই ঐ পারফিউম মাখবেন, মনে পড়ে যাবে সে বন্ধুর কথা। এভাবে স্মৃতিময় দিনের যেসব হিসেব ডায়েরিতে লেখা হয় না, তারা বেঁচে থাকে গন্ধে।

সুচিত্রা ভট্টাচার্যের সে উপন্যাসের কথা মনে আছে? 'অন্য বসন্ত'। যেখানে ছেলেটি পারফিউম তৈরি করে। সে উপন্যাসের অভিমন্যুর কথা বলছি। অভিমন্যুর ঠিক আর পাঁচটা ছেলের মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। কেমিস্ট্রিতে অনার্স শেষ করে সে একটি ছোটখাটো পারফিউমের ব্যবসা দাঁড় করাতে চায়, কারণ তার গন্ধ ভালো লাগে। অভিমন্যু এমন কোনো গন্ধ তৈরি করতে চায়, যেটা কেউ কখনো তৈরি করেনি—যে গন্ধে মিশে থাকে মন খারাপ আর ছুঁতে চাওয়ার আকুলতা, কিংবা ডানা মেলে শত ডানার প্রজাপতি।


'অন্য বসন্ত'-এর অভিমন্যু কিংবা কারও গায়ের গন্ধ শুঁকে সুগন্ধি বানানো দুবাইয়ের ইউসুফ ভাইয়ের মতো যারা গন্ধ তৈরি করে মানুষের মুখে হাসি ফোটান, আজকে সে গন্ধের ফেরিওয়ালাদের কথাই লিখব। তবে তার আগে সুগন্ধির ইতিহাস একটু জেনে নেওয়া যাক।

সুগন্ধি যেমন করে এল
আদিকাল থেকেই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে সুগন্ধির ব্যবহারের কথা জানা যায়। প্রাচীনকালে মানুষ বিভিন্ন গাছের ডালপালা বা নির্যাসকে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করত। ঠিক কবে কখন সুগন্ধি তৈরি শুরু হয়েছিল, তা সাল তারিখ হিসেবে বলা মুশকিল। তবে গুহাবাসী মানুষ শিকার থেকে আত্মরক্ষা, শস্য ফলানো থেকে বস্ত্র ও বাসস্থানের পর আস্তে আস্তে নিজের সুকুমার বৃত্তিকে বিকাশ করতে চেষ্টা করেছিল। তারই প্রমাণ এ সমস্ত চমৎকার সুগন্ধি।

সে সময় থেকেই বিভিন্ন ধর্মে দেবতার উদ্দেশে সুগন্ধি পুড়িয়ে আত্মশুদ্ধির ধারণা প্রচলিত হয়ে পড়ে। উদ্ভিদ থেকে সুগন্ধি তৈরি সর্বপ্রথম শুরু করেন মিশরের বাসিন্দারা। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন, সুগন্ধির ধোঁয়া ও সৌরভের মধ্যে বেঁচে থাকেন ঈশ্বর। লাতিন শব্দ 'পার' (মাধ্যম) এবং 'ফিউম' (ধোঁয়া) থেকে 'পারফিউম' শব্দের উৎপত্তি, যা সুগন্ধির ধোঁয়ার মাধ্যমে স্বর্গের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ভাবনাকে বোঝায়। ব্যাবিলন, সুমেরীয়, আর অ্যাসিরীয় সভ্যতায়ও ধর্মাচরণে সুগন্ধির ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।