আর্কাইভ | ঢাকা, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬ ০৯:৪১:৩৩ অপরাহ্ন
Photo
জোনায়েদ সাকি  
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
২৮ জানুয়ারী ২০২৪
১২:১৫:১৪ অপরাহ্ন

৯০ ভাগের বেশি মানুষ এই ভোট বর্জন করেছে: জোনায়েদ সাকি  


৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে দেশের জনগণ নীরব প্রতিরোধের সূচনা করেছে।  রাজনৈতিক ও আদর্শিক পার্থক্য থাকলেও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে সরকারই বিরোধী সব দলকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে। সরকারের দমন-পীড়নকে রাজপথে নামার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা উল্লেখ করে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম এই নেতা বলেন, এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জনগণের শক্তিকে সংগঠিত করাই আগামীতে তাদের চ্যালেঞ্জ।

সাক্ষাৎকারে জোনায়েদ সাকি চলমান আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা, সরকারের মেয়াদ, জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে ভিন্নমত, গণতন্ত্র মঞ্চের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি । 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, এটা একটা স্বৈরতান্ত্রিক-কর্তৃত্ববাদী-ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্ত। বিদ্যমান সংবিধানের ক্ষমতা কাঠামো এর ভিত্তি। এই বন্দোবস্ত বদল করে একটা গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য সংবিধান সংস্কার করে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করা, সাংবিধানিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক রূপান্তরের লক্ষ্যে আমরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছি। সাম্প্রতিককালে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের ৩১ দফা লক্ষ্য সামনে রেখে আন্দোলনের পদ্ধতি হিসেবে যুগপৎ ধরন সামনে এনে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে এক বছর ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন করছি। এতে জনগণের বিপুল সাড়াও আমরা পেয়েছি।

তবে ২৮ অক্টোবরে এসে সরকার যেভাবে একটা নাশকতার দায় চাপিয়ে পুরো আন্দোলনের ওপর ক্র্যাকডাউন করল, সে কৌশলের বিষয়ে যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার ছিল—সেটা গ্রহণ করতে বিরোধী দল পুরোপুরি সফল হয়নি। সরকার ব্যাপক দমন-পীড়ন করেছে; মানুষ যাতে নামতে না পারে, ভয়-ত্রাসের একটা রাজত্ব কায়েম করেছে। 

বিএনপি মহাসচিবসহ বিরোধী দলের অন্তত ২৭ হাজার নেতাকর্মীকে তারা জেলে পুরেছে। তা সত্ত্বেও যতটা সম্ভব আমরা জনগণকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে যুক্ত করতে চেষ্টা করেছি এবং আমরা একপর্যায়ে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছি। জনগণ সেই বর্জনের ডাকে বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছে। আমরা মনে করি, ৯০ ভাগের বেশি মানুষ এই প্রহসনের ভোট বর্জন করেছে এবং ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এই একতরফা এবং শুধু নিজেদের মধ্যে আসন ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচন মানুষ গ্রহণ করেনি।

বিরোধী দলের ডাকে যেমন জনগণ সাড়া দিয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে বিরোধী দলের সমর্থক নাও হতে পারে, কিন্তু তারাও এই অন্যায় প্রক্রিয়ায় শামিল হতে চায়নি। ফলে তারাও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা মনে করি, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন এবং তার মধ্য দিয়ে যে প্রত্যাখ্যান, সেটা নতুন নীরব গণপ্রতিরোধের সূচনা। এটার ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের পরবর্তী আন্দোলন শক্তিশালী করতে চাই। বিশেষ করে যে প্রবল রাষ্ট্রশক্তি একটা দলীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে, তাকে মোকাবিলা করার জন্য নতুন আন্দোলনের ধরন ও পথ অনুসন্ধান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা শুধু একটি সরকারকে মোকাবিলা করছি তা নয়, পুরো রাষ্ট্রশক্তি এখন সরকারের পেছনে একাট্টা হয়ে আছে। এটিকে মোকাবিলা করে আমরা জনগণের শক্তিকে সংগঠিত করতে চাই এবং সেটাই সামনের দিনে আমাদের চ্যালেঞ্জ।

জনগণকে আরও বেশি করে কীভাবে রাজপথে নিয়ে আসা যায় এবং বিশেষ করে জনগণের যে দাবি-দাওয়াগুলো আছে, আন্দোলন প্রক্রিয়ায় আমরা সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করব। জনগণ এরই মধ্যে অনেক সংকটের মধ্যে আছে। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকা মানেই জনগণের সংকট আরও ঘনীভূত হওয়া।

বিদ্যমান শাসনের মধ্যে জনগণের যে প্রথাগত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠানগুলো সেটা ট্রেড ইউনিয়নই হোক, বিভিন্ন পেশাজীবীর ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হোক, ছাত্র-যুব-নারীদের বিভিন্ন রকম ঐক্যবদ্ধ সংস্থা হোক—সেগুলো নানাভাবে দুর্বল করে ফেলেছে, প্রায় নাই করে ফেলেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে কীভাবে আন্দোলনকে আবার পুনঃসংগঠিত করতে পারি এবং এর মধ্য দিয়ে একটা ব্যাপক গণজাগরণ সৃষ্টি করতে পারি—সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।