আর্কাইভ | ঢাকা, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬ ০৫:৩২:১৪ অপরাহ্ন
Photo
নাছির উদ্দিন শোয়েব
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
০৪ জানুয়ারী ২০২৪
০৭:০৪:১৬ পূর্বাহ্ন
আপডেটঃ
১৩ জানুয়ারী ২০২৪
১২:২৫:২৩ অপরাহ্ন

ফিলিস্তিনের জন্য কিছু করতে পেরেছে মুসলিম বিশ্ব? : নাছির উদ্দিন শোয়েব


বিশ্বে ৫৭ টি মুসলিম দেশ।  ২০০ কোটি মুসলমান। মুসলিম দেশের মধ্যে কয়েকটি আছে প্রাকৃতিক সম্পদে শক্তিশালী। রয়েছে তেল-গ্যাসের খনি, স্বর্ণের ক্ষনি। রয়েছে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। বলতে গেলে মুসলিম বিশ্বের উপর নির্ভর করেই টিকে আছে গোটা অমুসলিম বিশ্ব! তেল বন্ধ করে দিলে অচল হয়ে পড়ে পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো। মুসলিম দেশগুলো এক হোলে কোনঠাসা হয়ে পড়ে পশ্চিমা শক্তি। মুসলিম বিশ্বের এতটা প্রভাব থাকা সত্বেও তারা কেন মুখথুবড়ে আছে? শক্তিধর মুসিলিম রাষ্ট্রগুলো হুঙ্কার দিলে অমুসলিম দেশগুলো অনেকটা অচল হয়ে পড়ে। তারা হঙ্কার দিলে আরবের বুকে দখল করে থাকা ইসরাইল কেঁপে ওঠার কথা। চার দিক দিয়ে ঘিরে ফেললে দখলদার ইসরাইল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কথা! 

অথচ গত তিন মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বুকে থেকে গাজায় ফিলিস্তিনি নিরিহ মুসলমানদের ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইল গণহত্যা চালিয়ে আসলেও চেয়ে চেয়ে দেখছে মুসলিম বিশ্বের নেতারা।  ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় নিহতের সংখ্যা  প্রায় ২২ হাজার । এ পর্যন্ত আহত হয়েছে ৫৬ হাজার ১৬৫ জন মানুষ। বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর খাবার সরবরাহ, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বন্ধ করে মানবিক ভাবে চরম এবং দুঃসহ বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে ইসরাইল। হাসপাতালগুলোতে হামলা চালিয়ে চিকিৎসা শেবা বন্ধ করে দিয়েছে। ইহুদিবাদী ইসরাইলের ব্যাপকভিত্তিক বোমাবর্ষণের কারণে গাজা উপত্যকায় যেমন রক্তপাত হচ্ছে, তেমনি সেখানে বিভিন্ন রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। গাজায় এখন সাধারণ জীবনযাপন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এক কথায় গাজাবাসীর দুর্ভোগ সম্পূর্ণভাবে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। গাজার বর্তমান অবস্থা একেবারে চরম পর্যায়ে।  

কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের মুসলিমদের জন্য কার্যকর কোনো ভূমিকাই রাখেনি। পবিত্র মক্কা ও মদিনার পর জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান। যা মসজিদুল হারামের পরে স্থাপিত দ্বিতীয় মসজিদ। এটি সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য তাৎপর্যের। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামি নিরিহ মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুদের রক্ষায় সর্বোপরি আল-আকসা মসজিদকে হেফাজতের জন্য মুসলিম দেশের নেতারা উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকাই রাখেনি। শুধু বিবৃতি ও হুশিঁয়ারি উচ্চানণ ছাড়া যুদ্ধ বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।   

আরবলীগ ও ওআইসিভুক্ত ৫৭টি মুসলিম দেশের নেতারা করণীয় নির্ধারণে সৌদি আরবে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। গোটা মুসলিম দুনিয়া অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল। তারা ভেবেছিল, এই বুঝি মুসলিম নেতাদের সম্বিত ফিরে এসেছে। তারা হয়তো এবার ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে হুংকার দেবে। কিন্তু না! তাদের ভূমিকায় গোটা মুসলিম উম্মাহ হতাশ হয়েছে। তারা কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি। প্রমাণিত হয়েছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) সত্যিই একটি অকার্যকর সংস্থা। এধরণের সংস্থা থাকা না থাকা সমান। 

মুসলিমদের এই নিরবতার সুযোগ নিয়েছে বাতিল শক্তি।  আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তথা মানবাধিকারের ধারক বাহক বলে পরিচিত পশ্চিমা বিশ্বও ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয়ে নিরব। শুধু নিরবই নয় ইহুদিবাদী ইসরাইলকে বিপুল যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ শক্তিধর রাষ্ট্র। তারা প্রকাশ্যে আরবের বুকে দখলদার ইসরাইলকে মারনাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে গাজার মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালাতে!  

গত তিন মাসে গাজায় ব্যাপক ভিত্তিক ধ্বংসযজ্ঞও চালানো হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। সবকিছু মিলে সেখানকার পরিস্থিতি এখন অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে বাধা বিঘ্নহীনভাবে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা ছড়ানো হচ্ছে যা থামানোর আজ কেউ নেই... । 

গাজা উপত্যকায় ব্যাপকভাবে রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র সতর্ক করা হয়েছে। এখন এই সংস্থা বলছে, ইসরাইলের ৯০ দিনের আগ্রাসনে সেখানকার অবস্থা একেবারে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গাজার রাস্তাগুলো রোগের উদ্বেগজনক বিস্তারের সাক্ষী। দুর্ভিক্ষ এগিয়ে আসছে, কোনোকিছুতেই লেকাজনের সাধারণ প্রবেশাধিকার নেই। এ অবস্থায় মানবিক যুদ্ধবিরতি ও জরুরি সাহায্য প্রদান এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির অবসান ঘটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও কে করবে এসব? 

হাসপাতালসহ অগণিত ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে ১৯ লাখ ফিলিস্তিনিকে ভিটেছাড়া করেছে ইসরাইল। এ অবস্থায় জেনোসাইড কনভেনশনে (গণহত্যা সনদ) সই করা দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে (আইসিজে) ইসরায়েলের গণহত্যার অভিযোগকে খতিয়ে দেখার জন্য আবেদন জানিয়েছে। 

কিন্তু আবারও প্রশ্ন যে এখানে মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা কোথায়? তবে মুসলমানদের এই নিরবতা প্রমান করে তাদের সামনে চরম দুর্দিন অপেক্ষা করছে। পৃথিবীতে অনেক সম্প্রদায় আছে, কিন্তু শুধু মুসলমানরাই কেন বিপদে? কারণ একটাই মুসলিমরা তাদের অতীত ইতিহাস ভুলে গেছে। ইসলামের সঠিক দিক নির্দেশনা তারা হারিয়ে ফেলছে। তারা উম্মাদনায় বিভোর হয়ে আছে। যুদ্ধ জয়ের সোনালী ইতিহাস তারা ভুলে গেছে। যেখানে মুসলিম জাতিকে সমূলে শেষ করার জন্য অমুসলিম শক্তিগুলো একতাবদ্ধ সেখানে মুসলিম বিশ্বের নিরবতা হাতশার হাতছানি ছাড়া কিছুই হতে পারে না।    

ই-মেইল: nubd77@gmail.com