আর্কাইভ | ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ ০২:২৩:১৮ অপরাহ্ন
Photo
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, প্রকাশিতঃ
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
০৯:০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন

আমরা কারও ওপর প্রতিশোধ নিবো না: জামায়াত আমির


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান বলেছেন, ঘোষণা দিয়েছি- আমরা কারও ওপর প্রতিশোধ নিবো না। প্রতিশোধ নেওয়ার মানে হচ্ছে, আইন হাতে তুলে নেওয়া। আইন যেখানেই হাতে তুলে নেওয়া হয়েছে, সেখানেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। প্রতিশোধ প্রতিহিংসার জন্ম দেয়, যুগ যুগ এটা চলতে থাকে।

শনিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ দারুল ইসলাম একাডেমি মাঠে আয়োজিত রোকন সম্মেলন ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই এই নোংরা কাজের এখানেই পরিসমাপ্তি হোক। তবে ন্যায় প্রতিষ্ঠার দাবি হচ্ছে- যিনি যে অপরাধ করেছেন নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে এবং সেটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে। বেআইনিভাবে নয়, রক্ষীবাহিনী যেভাবে খুন করেছে সেভাবে নয়, নব্য রক্ষীবাহিনী দিয়ে আপনি যেভাবে বাংলাদেশের মানুষকে আয়নাঘরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে মাসের পর মাস বছরের পর বছর রেখেছেন সেইভাবে নয়।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যেভাবে বিনা বিচারে ক্রসফায়ারের নামে যেখানে সেখানে মানুষ খুন করেছেন ওইভাবে নয়, আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বিচার হবে। যদি সেই আইনের শাসন বাংলাদেশে কায়েম হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ আগামীর বাংলাদেশ আর পথ হারাবে না। 


তিনি আরও বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ তার মুক্তির যে পথে উঠেছে গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত বাংলাদেশ চলতে থাকুক। কারও কোনো অপশক্তি যদি বাংলাদেশকে এ রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চায় তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত তাদের প্রতিহত করে দিবে ইনশাআল্লাহ। 

বর্তমানে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির মৌলিক ইস্যুতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সকল দল তার নিজস্ব জায়গা থেকে রাজনীতি করবে, বিবেকের তাড়নায় যা বলার দরকার বলবে, বর্তমান সরকারেরও প্রয়োজনীয় সমালোচনা করবে। এই সরকার যেন সংস্কারের কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারে তার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতাও করতে হবে। এভাবে ভারসাম্যপূর্ণ রাজনীতির মধ্যে দিয়ে সবাই এগিয়ে যাক। দল ও মত ভিন্ন থাকবে, এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য।

জামায়াতের আমির বলেন, সবাই আমার মনের মতো পছন্দের কথা বলবে না, এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। এজন্য সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতাও আমাদের থাকতে হবে। যারা সমালোচনা করে তারাই তো আমাদের প্রকৃত বন্ধু। যারা আমার সমালোচনা করে না, আমার ভুল দেখেও নীরব থাকে তারা আমার বন্ধু হতে পারে না। আমরা সমালোচনাকে অভিনন্দন জানাই, উৎসাহ দেই। ভাব আপনার কিন্তু ভাষা যেন হয় সত্যের ওপরে প্রতিষ্ঠিত, তাহলে ভাব যাই হোক এই সমাজ ও আমরা প্রকৃত জিনিসটা খুঁজে নেব ইনশাআল্লাহ। 

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দ্যেশ্যে বলেন, এই সাড়ে ১৫ বছর আপনারাও স্বাধীন ছিলেন না। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক আপনারাও মজলুম দলগুলোর বিরুদ্ধে কলম চালিয়েছেন, কথা বলেছেন। কারণ ভয়ে বা অন্যকোনো কারণে কিনা আমি তা বলতে পারব না। অনেকেই বলেন চাপের কাছে আমরা অসহায় ছিলাম, আর শাসকরা বার বার বলেছে মিডিয়া আমাদের স্বাধীন, কতটুকু স্বাধীন আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে, সেই স্বাধীনতার ফল আমরা দেখতে পাইনি। এইজন্য আপনাদেরকে দায়ী করব না। আল্লাহ এখন আপনাদের কণ্ঠও মুক্ত করে দিয়েছেন, হাতের অদেখা বাধনও আল্লাহ খুলে দিয়েছেন। আপনাদের কাছে অনুরোধ করব।

তিনি আরও বলেন, আপনারা যেন আপনাদের বিবেক অনুযায়ী এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এটি সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ, এটি হচ্ছে ভ্যানগার্ড। সকল পেশার মানুষ একদিক থেকে দেখে কিন্তু দুইটা পেশার মানুষ চারদিক থেকে দেখে। একটি যারা সমাজ পরিবর্তন করতে চান রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও আরেকটি মিডিয়া। তারা ডান-বাম ও সামনে-পিছন থেকে দেখবেন। তারা হবেন অকুতোভয়, এজন্যই তাদেরকে বলা হয় জাতির বিবেক আর মিডিয়াকে বলা হয় জাতির দর্পন। এই জায়গাটি হারিয়ে গিয়েছিল, আবার সেটা মজবুতভাবে পূণ:প্রতিষ্ঠা হোক আমরা সেই দোয়া করি। 

জামায়াতের আমির আরও বলেন, তারা যুদ্ধের পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধাসহ হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। তারা দেশকে যে কালো গহ্বরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল দেশ এখনও সেই গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। বিশেষ করে বিগত সাড়ে ১৫ বছর যারা যেভাবেই হোক ক্ষমতায় ছিলেন তারা জাতিকে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠিয়েছিলেন, বিশ্বে রোল মডেল বানিয়েছিলেন বলে নিজের মুখে বারবার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু কীসের বিনিময়ে? যাদের রক্তের বিনিময়ে, যাদের রক্ত চুষে নেওয়ার বিনিময়ে, মানুষের ইজ্জত লুন্ঠন করার বিনিময়ে, কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়ার বিনিময়ে, সকল দলকে কোণঠাসা করে দিয়ে আবার একদলীয় বাকশাল কায়েম করার বিনিময়ে। এর কারণে জনগণের মনে ক্ষোভ, যন্ত্রণা, কষ্ট সেই ২০০৯ সাল থেকেই। 

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যাদের ওপরে সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে তার নাম জামায়াতে ইসলাম। একে একে প্রমাণ নয়, ক্রমিক অনুসারে ১ থেকে ১১ শীর্ষ দায়িত্বলীল নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, জেলের ভিতরে তিলে তিলে তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। চেয়েছিল তারা প্রাণ ভিক্ষা চাক, কিন্তু তারা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথানত করেননি। যারাই প্রতিবাদ করেছেন তাদের ওপরেই গোলাবারুদ নেমে এসেছে। আমরা অনেক আন্দোলন করার চেষ্টা করছি। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার একটি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত এই স্বৈরশাসকের বিদায় নিতে হয়েছে। 

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ও জেলা জামায়াতের আমির শাহীনুর আলমের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় জামায়াত ইসলামের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন, অর্থ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন, আবু তালেব মন্ডল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য প্রফেসর ড. মাওলানা আব্দুস সামাদ।