আন্তর্জাতিক ডেস্ক 
প্রকাশিতঃ ০৫ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৪৩:৫৩ পূর্বাহ্ন
মুসলিম-অভিবাসীদের জন্য লড়ার অঙ্গীকার মামদানির

মুসলিম-অভিবাসীদের জন্য লড়ার অঙ্গীকার করেছেন নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক অন্ধকারের এই সময়ে নিউইয়র্ক শহর হবে এক আলোর দিশা। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অভিবাসী, মুসলিম, ইহুদি ও কৃষ্ণাঙ্গসহ সব নিউইয়র্কবাসীর অধিকারের জন্য তিনি লড়বেন।

মামদানি বলেন, আপনি যদি অভিবাসী হন, ট্রান্স কমিউনিটির সদস্য হন, তাদের মধ্যে একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী হন যাকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন, কিংবা এমন সিঙ্গেল মাদার হন যিনি এখনো দ্রব্যমূল্য কমার অপেক্ষায় রয়েছেন—তাহলে জেনে রাখুন, আপনার সংগ্রাম আমাদেরও সংগ্রাম। আমরা এমন এক সিটি হল গড়বো, যা ইহুদি নিউইয়র্কবাসীর পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে এবং ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কখনো পিছপা হবে না। সেই সঙ্গে ১০ লক্ষাধিক মুসলিম জানবে—এই শহর তাদেরও।


নির্বাচনে জয়ের পর সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে এ ডেমোক্র্যাট নেতা বলেন, আপনারা প্রমাণ করেছেন, নতুন নেতৃত্ব সম্ভব—যখন রাজনীতি মানুষকে অবজ্ঞা নয়, সম্মানের সঙ্গে সম্বোধন করে।

তিনি এই জয়কে উৎসর্গ করেন সেই সব মানুষকে, ‘যাদের এই শহরের রাজনীতি প্রায়ই ভুলে যায়- সেনেগালের ট্যাক্সিচালক থেকে উজবেক নার্স, ত্রিনিদাদের রাঁধুনি পর্যন্ত’।

মামদানি শেষে বলেন, এই শহর আপনাদের শহর, আর এই গণতন্ত্রও আপনাদের।

সূত্র: আল-জাজিরা

বিজয় ভাষণে ট্রাম্পকে মামদানি বললেন, ‘ভলিয়ম বাড়ান’

এদিকে নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি সময় নষ্ট না করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হতে যাচ্ছে তাদের মধ্যে। যে দ্বন্দ্ব সম্ভবত ৩৪ বছর বয়সী মেয়র ও ট্রাম্পের সম্পর্ক বলে দেবে। 

মঙ্গলবার রাতে বিজয় ঘোষণা হওয়ার পর সমর্থকদের সামনে বিজয় ভাষণে মামদানি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি যত দূর জানি, আপনি দেখছেন।


আমি আপনাকে চারটি শব্দ বলব, টার্ন দ্য ভলিউম আপ (আওয়াজ বাড়ান)। 
সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মামদানি বলেন, নিউইয়র্ক প্রমাণ করেছে যে, তারা রাজনৈতিক অন্ধকারের মুহূর্তে এক আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়াবে। তিনি আরো বলেন, আমরা এখানে আমাদের প্রিয়জনদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বাস করি। আপনি অভিবাসী হোন বা ট্রান্স সম্প্রদায়ের সদস্য হোন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে ফেডারেল চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন তাদের একজন হোন, কিংবা এমন কোনো একক মা, যিনি এখনও মুদির পণ্যের দাম কমার অপেক্ষায় আছেন, অথবা অন্য কেউ যারা দেয়ালে পিঠ ঠেকে থাকা অবস্থায় লড়ছেন।

নিউইয়র্কে নির্বাচনে জয়ের পর মামদানি বলেন, স্বৈরশাসকরা কখনোই আমাদের শহরকে ভয় দেখাতে পারবে না। শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র হতে চলা মামদানি আরো বলেন, নিউইয়র্ক আর এমন একটি শহর থাকবে না, যেখানে ইসলামভীতি ছড়িয়ে নির্বাচনে জেতা সম্ভব হবে।

ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে জোহরান আরো বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কারো কাছে আপনি পৌঁছাতে চাইলে আপনাকে আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’ জোহরান যখন তার বিজয়ী ভাষণে ট্রাম্পকে নিয়ে কথা বলছেন, ওই সময় ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘…এবং এবার এটা শুরু হলো!’

ভাষণ শুরুর সময় সমর্থকরা ‘জোহরান, জোহরান’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

মামদানি বলেন, ‘আজ আমরা দেখিয়েছি, আশা এখনো বেঁচে আছে। নিউইয়র্কবাসী এখন তাদের নেতাদের কাছে আরো সাহসী পদক্ষেপ আশা করবে।’


নিউইয়র্কের নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। নির্বাচনী প্রচারের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি নিজ দলের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে সমর্থন জানিয়েছেন।


মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা তিনটি নির্বাচনে বিশাল জয়লাভ করেছেন। এটি ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার নয় মাস পর প্রথম বড় নির্বাচন। এতে দলের নতুন প্রজন্মের নেতাদের জায়গা হয়েছে এবং আগামী বছরের কংগ্রেস নির্বাচনের আগে বিপর্যস্ত ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে নতুন আশা দেখাচ্ছে। 

মামদানির এই বিজয় নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে এক নতুন রাজনৈতিক যুগের শুরু করেছে। যেখানে তিনি একদিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতের জন্য প্রস্তুত, অন্যদিকে শহরের গভীর অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবেলা করতে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন।
সূত্র : বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।


উপদেষ্টা সম্পাদক : এন, ইউ, বিশ্বাস
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফোরকান হোসেন

৪৯/১/এ, পুরানা পল্টন লেন, চতুর্থ তলা, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১৩১৮০০৪৪
ইমেইল: akhonbangla24@gmail.com