
পার্সটুডে - গাজা উপত্যকা পরিষ্কার করার জন্য ইসরাইলের প্রকাশিত পাঁচ-পর্যায়ের পরিকল্পনা আধুনিক গণহত্যার এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরে। মিডিয়ার নীরবতা এবং পশ্চিমা শক্তির কূটনৈতিক চালের আড়ালে সংঘটিত হচ্ছে এমন একটি অপরাধ।
(ISNA) এর উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম "মিডল ইস্ট আই" গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর অপরাধযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে এক প্রতিবেদনে গাজার ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার এবং একটি অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ইসরাইলের ৫-পর্যায়ের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে। এই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের মতে, ইহুদিবাদী ইসরাইল সরকার ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার এবং তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইছে; এসবের মধ্যে একটি পরিকল্পনা হচ্ছে গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করা, হত্যা, দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি, ধ্বংস এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন করা। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, ইসরাইলিরা বারবার গাজাকে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠী শূন্য করার তাদের ইচ্ছার কথা ঘোষণা করেছে। তবে, বেশিরভাগ যুদ্ধের সময় ইসরাইলি নেতারা জাতিগত নির্মূলের এই কর্মসূচির কথা স্পষ্টভাবে বলা থেকে বিরত থেকেছে। এখন যেহেতু ইসরাইল সরকার এই চূড়ান্ত লক্ষ্য বাস্তবায়নের পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাই এই প্রকল্পের পর্যায়গুলো পরীক্ষা করা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করছে। এবারে এই পাঁচটি পরিকল্পনার বর্ণনা তুলে ধরা হলো।
প্রথম ধাপ: মিডিয়াকে চুপ করিয়ে দেওয়া
জাতিগত নির্মূলে ইসরাইলিদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেমন ১৯৪৮ সালের দখলদারিত্বের ঘটনা যার প্রভাব এখনো জারি রয়েছে। তারপর থেকে, ইহুদিবাদী ইসরাইল ধীরে ধীরে এই নীতি অব্যাহত রেখেছে, বিশেষ করে পশ্চিম তীরে। এই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে, ইহুদিবাদী ইসরাইলের বর্তমান নেতারা বুঝতে পেরেছে যে গাজা থেকে সরে যেতে হলে প্রথমে মিডিয়ার মুখ বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, ইহুদিবাদীরা গাজা উপত্যকাকে বহির্বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে যাতে কেউ গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো খবর পেতে না পারে।
দ্বিতীয় পর্যায়: জনসংখ্যা হ্রাস
পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে যতটা সম্ভব ব্যাপক বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হবে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার বৈঠকে "জনসংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার" ব্যাপারে তার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন এবং এই পরিকল্পনা অনুসারে, গাজার বাসিন্দাদের উপর হাজার হাজার বোমা ফেলা হয়েছে। বোমা হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে - যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
তৃতীয় পর্যায়: স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করা
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের জাতিগত নির্মূল কর্মসূচির তৃতীয় পর্যায়টি হচ্ছে, এই অঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত। এই পর্যায়ে, ইসরাইল পরিকল্পিতভাবে বোমাবর্ষণ ও হাসপাতাল ধ্বংস করে, চিকিৎসা অবকাঠামোর ওপর এমনভাবে আঘাত হানছে যাতে আহতদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া যায়।
চতুর্থ পর্যায়: গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলা
প্রথম তিনটি পর্যায়ই পৃথিবীতে নরক তৈরির জন্য যথেষ্ট, কিন্তু চতুর্থ পর্যায়টি সম্ভবত ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর জাতিগত নির্মূল পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পর্যায়ে, সরকার গাজার জীবনযাত্রার অবস্থা এমনভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে যে ফিলিস্তিনিদের পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। ইসরাইল পরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, আশ্রয়কেন্দ্র এবং রাস্তাঘাট ধ্বংস করেছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের মতে, জানুয়ারি পর্যন্ত গাজার ৯০ শতাংশেরও বেশি আবাসন ইউনিট সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হয়ে গেছে।
পঞ্চম পর্যায়: কূটনৈতিক বৈধতা
ইসরাইল আশা করে যে পঞ্চম পর্যায় হবে গাজায় জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চূড়ান্ত পদক্ষেপ। এই পর্বে রাজনৈতিক কৌশল এবং লজিস্টিক সমন্বয়ের উপর নজর দেয়া হচ্ছে। জানুয়ারিতে, ট্রাম্প গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের গণবিতাড়নের প্রস্তাব করেছিলেন; তেল আবিব তাৎক্ষণিকভাবে স্বাগত জানিয়েছিল এমন একটি প্রস্তাব। কিন্তু এই তথাকথিত "ট্রাম্প পরিকল্পনা" ট্রাম্পের নিজের থেকে উদ্ভূত হয়নি বরং এই পরিকল্পনাটি দীর্ঘদিন ধরে "প্রতিশ্রুত ভূমি" এবং ফিলিস্তিনি ভূমিতে জাতিগত নির্মূলের কৌশলের অংশ হিসাবে ইসরাইলেরই উত্থাপিত।
খবর সূত্র: পার্স টুডে
আল আকসা চত্বরে হাজারো ইহুদি প্রার্থনাকারীে
এদিকে পূর্ব জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে অবস্থিত পবিত্র আল আকসা মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করেছে হাজারো ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী ইহুদি। তাদের পাসওভার বা ছুটির দিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটায়। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে কাজ করে জেরুজালেম গভর্নরেট। তারা বলেছে, ইহুদিরা মাগরাবি গেট দিয়ে ওই স্থাপনায় ঢুকে পড়ে এবং সেখানে প্রার্থনা করে। একই সঙ্গে তারা মসজিদ চত্বরে পূর্ব দেয়ালে বাব আল-রাহমায়ও যায়। উল্লেখ্য, ২০১৯ সাল থেকে এখানে প্রার্থনা করা নিয়ে ইসরাইলি পুলিশ এবং মুসলিমদের মধ্যে সংঘাত লেগে আছে।
উল্লেখ্য, ১২ই এপ্রিল থেকে ২০শে এপ্রিল পর্যন্ত পালিত হয় পাসওভার উৎসব। কমপক্ষে তিন হাজার বছর আগে এ সময়ে মিশর থেকে ইসরাইলিদের দলে দলে বিতাড়ন শুরু করা হয়। বৃহস্পতিবার আল আকসা মসজিদ চত্বরে ‘তালমুদিক’ রীতি পালন করেন উগ্র ডানপস্থি রিলিজিয়াস জিওনিজম পার্টির এমপি জভি সুকোট। ‘তালমুদিক’ রীতে প্রার্থনাকারীরা মাথা নত করে মাটির সঙ্গে মিশায়।
অন্যদিকে পশ্চিম দেয়ালে ‘প্রিস্টস ব্লেসিং’ পালন করেন হাজারো ইহুদি প্রার্থনাকারী। উল্লেখ্য, আল আকসা মসজিদের পশ্চিম পাশের দেয়ালের বাইরে ওই ওয়াল। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা রিপোর্ট করেছে যে, আল আকসাকে একটি সামরিক জোনে পরিণত করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এ জন্য সেখানে তারা কঠোর নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ প্রতিরোধ করা হয়েছে। ওদিকে মঙ্গলবার দখলীকৃত পশ্চিম তীরের দক্ষিণে হেব্রনে ইব্রাহিম মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। এর ফলে সেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।