
ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। তদন্তের ক্ষেত্রে বেঁচে ফিরে আসা ব্যক্তি, সামরিক বাহিনী, র্যাব ও পুলিশের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, ডিজিএফআই, এনএসআই, হুকুমদাতা, সামরিক অপারেশনে বাধাদানকারী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, বিদেশি সংশ্লিষ্টতা এবং একই সঙ্গে সেনা আইন ভঙ্গের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করছে কমিশন।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম নতুন ভবনের সপ্তম তলায় সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত তদন্ত কমিশন। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান।
স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান তৎকালীন বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক আ ল ম ফজলুর রহমান জানান, কমিশন পাঁচটি কর্মপরিধি ঠিক করেছে। এর মধ্যে আছে পিলখানায় সংঘটিত ঘটনার স্বরূপ উদ্ঘাটন। ঘটনাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারী, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ইন্ধনদাতা এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয়সহ দেশি ও বিদেশি–সংশ্লিষ্ট অপরাধী ব্যক্তি/গোষ্ঠী/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/বিভাগ/সংগঠন ইত্যাদি চিহ্নিতকরণ। হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাপর অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলা এবং সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্তগণের দায়/অপরাধ অক্ষুণ্ন রেখে সংশ্লিষ্ট মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমন প্রকৃত অপরাধীদের তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তকরণ। কমিশন জানায়, এখন পর্যন্ত যে ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন লে. জেনারেল তিনজন, মেজর জেনারেল দুজন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পাঁচজন, কর্নেল চারজন, লে. কর্নেল চারজন, মেজর সাতজন, ক্যাপ্টেন দুজন, বিডিআর সদস্য সাতজন ও শহীদ পরিবারের সদস্য তিনজন।
বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আ ল ম ফজলুর রহমান জানান, বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। কমিশন গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তিকে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রয়োজনে আমন্ত্রণ জানাবে। এই বিষয়ে সবাইকে ধৈর্য ধারণের জন্য তিনি অনুরোধ জানান। যে কেউ ওয়েবসাইটের (নফৎ-পড়সসরংংরড়হ.ড়ৎম) মাধ্যমে তথ্য নিতে পারবেন বলেও জানান।
তদন্তের চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ফজলুর রহমান আরও বলেন, ইতিমধ্যে অনেক সাক্ষী এবং ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন, পলাতক আছেন এবং বিদেশে পালিয়ে আছেন/বিদেশে অবস্থান করছেন। তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়বে বা বিলম্বিত হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়বে, এমন ধারণা করা যায়। এ ছাড়া সময়ের বিবর্তনে অনেক সাক্ষীর পক্ষে সঠিক তারিখ, সময় ও ঘটনার অনেক বিষয় স্মরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছু বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি লেখা হয়েছে বলেও জানান ফজলুর রহমান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাক্ষ্য হিসেবে বক্তব্য নেওয়া অধিকাংশই সেনা কর্মকর্তা অবসরে গেছেন। অন্তত মেজর পর্যন্ত দুই-একজন ছাড়া সকলেই অবসরে।
তিনি জানান, ইতিহাসের নৃশংসতম পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্তারিত জানতে ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদকে খুবই প্রয়োজন। আর এই বিষয়টিকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জোরালোভাবে খতিয়ে দেখছেন তারা। কমিশন প্রধান বলেন ১৬ বছরের পুরোনো ঘটনার রহস্য উদঘাটন কিছুটা জটিল হলেও তারা সত্য উদঘাটনে বদ্ধ পরিকর। তবে সেক্ষেত্রে কমিশনের জন্য বেধে দেয়া ৯০ দিনের চেয়ে একটু বাড়তি সময় প্রয়োজন হতে পারে বলেও জানান কমিশন প্রধান।