
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বুধবার বহুল আলোচিত নাইকো দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক রবিউল আলম বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়াসহ আটজনকে এ মামলা থেকে খালাস দেন।
এ রায়ের মাধ্যমে সবকটি মামলায় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন, অর্থাৎ তিনি ৩৭টি মামলা থেকেই খালাস পেলেন। এদিকে গতকাল উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়াকে প্রতীকী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
বিচারক রবিউল আলম রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে বলেন, রাজনৈতিক কারণে এবং হয়রানি করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের জড়িত করা হয়েছিল। একই ধরনের মামলা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ছিল। যেহেতু এ মামলা তার বিরুদ্ধে চলেনি, তবুও এ মামলায় ফুল ট্রায়াল হয়েছে।
আদালত আরো বলে, এ মামলায় সেলিম ভূঁইয়াকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে জোরপূর্বক ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। সে কারণে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিকে ট্রু বলার সুযোগ নেই। এ মামলার উদ্দেশ্য হলো গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, কাশেম শরীফসহ অন্যদের জড়িত করতে জোরপূর্বক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা।
এ মামলায় খালাস পাওয়া অপর আসামিরা হলেন— তৎকালীন মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন এবং সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সব আসামি খালাস পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে রায়কে ঐতিহাসিক ও দৃষ্টান্তমূলক বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা জিইয়ে রাখা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও আদালত খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছে। আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছেন তিনি।
আইনজীবী ও আদালত সূত্র থেকে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলার প্রায় সবকটিই নাশকতা ও মানহানির। ২০০৭ সালের বিতর্কিত এক-এগারোর জরুরি সরকার এবং পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার হয়রানিমূলক এ মামলাগুলো দেয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টসংক্রান্ত দুটি মামলায় খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছিল। উচ্চ আদালতে ইতোমধ্যে তিনি দুটি মামলা থেকেই নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এ ছাড়া মানহানি এবং নাশকতার অন্য ২৩টি মামলাও আদালত খারিজ করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চুক্তি করে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর সেনা সমর্থিত সরকারের সময় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে ওই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে মামলায় আসামি হিসেবে রেখে দেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর বিগত সরকারের সময় ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর নাইকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে খালেদা জিয়ার করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। তার পক্ষে আবারও অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে আবেদন করলে ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট তা খারিজ করে দেয় উচ্চ আদালত। এরপর গত বছরের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ আট আসামির অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠন করে শেখ হাফিজুর রহমানের আদালত।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবিচার করায় প্রথমবার আপিল বিভাগে প্রতীকী ক্ষতিপূরণ দাবি করলেন একজন সিনিয়র আইনজীবী। বুধবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চে বিসিএস ও নির্বাচনসংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিকালে আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন বিচার বিভাগের কাছে এ ক্ষতিপূরণ চান।
এ আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী নয়, একজন নারী এবং সাধারণ নাগরিক হিসেবে মূল্যায়ন করলেও তার সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের প্রতীকী একটা সাজা হলেও দেন। ইতিহাসে তা তোলা থাকুক।