
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, বাংলাদেশে বুলডোজারের সংস্কৃতি চালু করেছে আওয়ামী লীগ। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বুলডোজার দিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দলীয় কার্যালয় এমনকি কবর পর্যন্ত ভাংচুর করেছে। বালুর ট্রাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়ার সংস্কৃতিও এদেশে আওয়ামী লীগ চালু করেছে।
সাতক্ষীরায় জামায়াত নেতাদের বাড়ি-ঘর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ কর্তৃক রাষ্ট্রীয় মদদে ভাঙ্গার কথা স্মরণ করে ডা. তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামী জুলুমের শিকার হলেও আজ র্পন্ত জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা কারো উপর জুলুম করেনি। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলেও কেউ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হবে না। জামায়াতে ইসলামী এদেশে একটি নতুন ধারার মুক্ত চেতনার রাজনীতি চর্চার পথ তৈরি করতে চায়। প্রতিটি মানুষকে তার মতপ্রকাশের পাশাপাশি স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ ও পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এদেশের মানুষ একটি কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র পাবে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে যাকাত ও ওশর শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে যাকাত এবং ওশর রাষ্ট্র কর্তৃক আদায় হবে। যাকাত ভিত্তিক অর্থনীতি চালুর মাধ্যমে সুদমুক্ত বাংলাদেশ গঠন হবে। সুদ ব্যবস্থায় মানুষ শোষিত হয়। যাকাত ব্যবস্থায় মানুষের সম্পদের পরিশুদ্ধতা হয়। সম্পদ পরিশুদ্ধ হলে জীবনের সব কিছুই পরিশুদ্ধ হয়।
রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনা অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, যাকাত এবং ওশর শুধু নয়, প্রত্যেক মুসলিমকে দ্বীন কায়েমের জন্য তার মাল ও জান কুরবানির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যাকাত আদায় যেভাবে ফরজ। একই ভাবে দ্বীন কায়েম করাও ফরজ। দ্বীন কায়েমের জন্য অর্থ, সম্পদ, মেধা, ঘাম, শ্রম ও সময় দিতে হয় এবং হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন প্রমুখ।
সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণ কর্তৃক ২০২৪ সালে পরিচালিত সামাজিক কার্যক্রমের প্রামণ্যচিত্র তুলে ধরে ২০২৫ সালের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
২০২৪ সালে পরিচালিত সামাজিক কার্যক্রমের প্রামণ্যচিত্র তুলে ও ২০২৫ সালের পরিকল্পনার উপর বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের
সাবেক অতিরিক্ত সচিব খন্দকার রাশেদুল হক বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করলেও জামায়াতে ইসলামীর মতো এতো জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা তিনি রাষ্ট্রের কাজে দেখেননি। জামায়াতে ইসলামী সরকারে না গিয়েও যে সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে তা প্রশংসার দাবিদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, অথচ অন্য রাজনৈতিক দল গুলো প্রকাশ্যে বলছে তারা ক্ষমতায় গিয়ে এই করবে, সেই করবে! তিনি ঐ রাজনৈতিক দলের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার আগে কি তাদরে কোন দায়িত্ব সমাজ বা দেশের প্রতি নাই। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে কেন করতে পারছে। বিশ্বাস করার যথার্থ কারণ করেছে, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় যাওয়ার আগে যেহেতু সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কাজ করতে পারছে তাহলে ক্ষমতায় গিয়েও জামায়াত পারবে রাষ্ট্রের উন্নয়ন করতে । অন্যরা নয়।
আরেক অতিরিক্ত সচিব (অব.) আবদুল হালিম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম ও পরিকল্পনার প্রশংসা করে বলেন, যাকাত আদায় করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের থাকলেও রাষ্ট্র সেটি যথাযথ করছে না। জামায়াতে ইসলামীর পূর্বের পরিচালিত কার্যক্রমে বিশ্বাস করা যায়, শুধু যাকাত নয় পুরো রাষ্ট্রের দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামীর হাতে তুলে দেওয়া হলে, একটি কল্যাণ রাষ্ট্র জাতিকে উপহার দেওয়া সম্ভব হবে। তাই তিনি জামায়াতে ইসলামীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি মানবকি সংগঠন হিসেবে নির্যাতিত, নিপিড়ীত, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। জামায়াতে ইসলামীর ৪ দফা কর্মসূচির অন্যতম হচ্ছে সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা। এই সমাজ সেবার অংশ হিসেবে আমীরে জামায়াত সহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নির্যাতিত, নিপিড়ীত, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের দৌড়গৌড়ায় ছুঁটে যায়। যেখানেই দুর্যোগ, সেখানেই জামায়াত। সবার আগে সব সময়। এসময় তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামীর এসব সামাজিক কার্যক্রম সংগঠনের কর্মী, সদস্য ও সুধী মন্ডলীর দান-অনুদানে পরিচালিত হয়। বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামীকে কোন ধরনের কার্যক্রম, সভা-সমাবেশ করতে দেয়নি। সীমিত পরিসরে গোপনীয়ভাবে আমাদেরকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এই জাতীয় কার্যক্রম চালাতে হয়েছে। মানুষের জন্য সহায়তা গোপনে দিতে হয়েছে। মহান আল্লাহর অশেষ দয়া আর সাহায্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কারণে পুরো জাতির স্বস্তি ফিরে এসেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের দেশ ও নির্যাতিত, নিপিড়ীত মানুষের কল্যাণে এবং উন্নয়নে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মাল ও জান কুরবানির জন্য প্রস্তুত থাকতে তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে ড. আব্দুল মান্নান, মোহাম্মদ কামাল হোসাইন ও শামসুর রহমান, মহানগরী দক্ষিণে কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, এডভোকেট এস. এম কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, মহানগরী দক্ষিণে কর্মপরিষদ সদস্য কামরুল আহসান হাসান সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সভায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, সামরিক-বেসামরিক সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।