
পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় খালাস পেয়ে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের শহীদদের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। ফ্যাসিবাদের পতন না হলে আমি আজ এ মামলা থেকে খালাস পেতাম না।
সোমবার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের আমলে বিচার বিভাগ আওয়ামী লীগের এক্সটেনশনে পরিণত হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে যে হাস্যকর ভুয়া মামলা দায়ের করা হয়েছিল, এ মামলা তো জজের প্রথম দিনই ছুড়ে ফেলা উচিত ছিল। আমি শেখ হাসিনার পুত্র জয়কে আমেরিকায় নাকি কিডনাপের চেষ্টা করেছি। এটা কোথায় বসে করেছি, জেলাখানায় বসে করেছি। এ মামলার বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক ছিল না। আমি জানতামই না। হাসিনা এ মামলা দিয়েছিল আমাকে দীর্ঘদিন জেলে রাখার জন্য।
মাহমুদুর রহমান বলেন, যে দেশে আইন আছে, বিচার আছে, গণতন্ত্র আছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে সে দেশে প্রথমই এ মামলা রিজেক্ট হয়ে যেতো। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম, তাই আমি বিদেশ থেকে এসে স্যারেন্ডার করেছি। আদালতে মামলা করে আজকে আমি রায় পেয়েছি। আমাকে আদালত মামলায় খালাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি আশা করবো শুধু বর্তমান সরকার নয়, ভবিষ্যতে যারা গণতান্ত্রিকভাবে সরকারে আসবে তারাও যেন বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ না করে। বিচার বিভাগ যেন স্বাধীন থাকে। এখানে যারা জজ নিয়োগ পাবেন, তাদের যেন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়- এটাই আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রত্যাশা।
যে বিচারক এ মামলার রায় দিয়েছেন, সে বিচারক কতটা বায়েস্ট ছিলেন,সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল-আমিন বলেন, একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমরা কেউই সেইফ ছিলাম না, একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র কীভাবে আইনকে ব্যবহার করে, আদালতকে ব্যবহার করে, তার সম্মানিত নাগরিকদের হেনস্তা করার জন্য জেলে ভরে রাখার জন্য চেষ্টা করে, তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ হলো এই মামলা।
তিনি বলেন, এ মামলায় সত্যের বিন্দুমাত্র কিছু ছিল না। সাক্ষী ছিল না, এভিডেন্স ছিল না। আইনেরও তোয়াক্কা করতে হয় নাই। এভিডেন্স ছাড়া যে সাজা দেয়া যায়, এ মামলায় তা আমরা দেখেছি। আমরা বলেছি এ মামলা করা থেকে শুরু করে সাজা দেয়া পর্যন্ত যারা জড়িত ছিল, তাদের বলতে হবে কী চাপে পড়ে তারা এই ধরনের একটা বেআইনি রায় দিয়েছিলেন।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তারিক এজাজের আদালত এ রায় দেন। এদিন সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান আদালতে উপস্থিত হন। তার উপস্থিতিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল-আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন মাহমুদুর রহমান। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাঁচ দিন কারাভোগের পর ৩ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
জানা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত আমার দেশ পত্রিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ ৫ জনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।