দক্ষিণ লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটিতে অবস্থিত সৌদি দূতাবাস। ইসরাইলকে উদ্দেশ করে ইরানের হুমকির পর লেবাননের ভূখণ্ডে নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে সৌদি নাগরিকদের সেখানে ভ্রমণ না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া লেবাননে অবস্থিত সৌদির যেসকল নাগরিক রয়েছে তাদের লেবানন ত্যাগের অনুরোধ জানিয়েছে সৌদি প্রশাসন। দেশটি তাদের নাগরিকদের যেকোনো বিষয়ে দূতাবাসের সহয়তা নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছে।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ।
এতে বলা হয়, ইরানের ওই হুঁশিয়ারি লেবাননের ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ আন্দোলনের সাথে ইসরাইলের একটি ভয়াবহ যুদ্ধের আশঙ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হামাসের সমর্থনে দক্ষিণ লেবানন সীমান্তে ইসরাইলের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই গোলা বিনিময় করছে হিজবুল্লাহ।
সম্প্রতি ওই সীমান্তে দুদলের গোলাগুলি চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ইসরাইল হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে তাদের হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে। এতে পাল্টা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হিজবুল্লাহ। এছাড়া সশস্ত্র এই যোদ্ধাগোষ্ঠীটির সাথে একযোগে ইসরাইলে হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।
এতে ওই অঞ্চলে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কায় নিজের নাগরিকদের বার্তি সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে সৌদি আরব।
হিজবুল্লাহ আর ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ নয়, ঘোষণা আরব লীগের
লেবাননের সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে আর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে আরব বিশ্বের দেশগুলোর জোট আরব লীগ। শনিবার আরব লীগের সহকারী মহাসচিব ও মিসরীয় কূটনীতিক হোসাম জাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সংসদীয় উপদলের নেতা মোহাম্মদ রাদের সাথে বৈরুতে এক বৈঠকের পর ওই ঘোষণা দিয়েছেন।
আরবি ভাষার সংবাদমাধ্যম আল-আখবারকে তিনি বলেছেন, হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরব লীগ। কারণ এই গোষ্ঠীটি বর্তমান রাজনীতি ও লেবাননের ভবিষ্যতের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে আরব বিশ্বের বাদ দেওয়ার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম এখনও নীরব রয়েছে।
আল-আখবার বলেছে, ২০১৬ সালের পর আরব লীগের সহকারী মহাসচিব জাকির সাথে হিজবুল্লাহর নেতা রাদ প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছেন। ওই বছর সৌদি আরবের উদ্যোগে শিয়া মতাবলম্বী গোষ্ঠীটিকে ‘‘সন্ত্রাসী সংগঠন’’ হিসেবে ঘোষণা দেয় আরব লীগ।
একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া ও আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করা হয়েছিল।
বৈরুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মিসরীয় ওই কূটনীতিক বলেছেন, আরব লীগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইতের পক্ষে লেবানন ও এর জনগণের প্রতি এই অঞ্চলের সম্প্রদায়গুলোর সংহতি প্রকাশের লক্ষ্যে তিনি বৈরুত সফর করছেন।
আরব লীগের সহকারী এই মহাসচিব বলেছেন, দক্ষিণে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি কেবল লেবাননেই নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষ করে সংঘাত যদি ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেটি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিসরীয় এই কূটনীতিক জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা ১৭০১ মেনে চলার জন্য সব পক্ষের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে; যা দক্ষিণ লেবাননে সংঘাত বন্ধ করবে।